সারাদেশে সাতদিনের ‘কঠোর বিধি-নিষেধ’ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সাতদিনের সরকারি বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এই বিধিনিষেধ থাকবে আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত।
সরকারি বিধি-নিষেধ এবং মানুষের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মাঠে টহলে আছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা।
বিধিনিষেধের সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। বিধি নিষেধের সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। শপিংমল,মার্কেট ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
পন্যপরিবহণে নিয়োজিত যানবাহন ও বন্দরসমূহ অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। খাবারের দোকানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অনলাইনে বিক্রি করা যাবে।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে বসবে কাঁচাবাজার। এর আগে, বুধবার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এই কঠোর বিধিনিষেধে যা যা করনীয় বলে জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো:
১) জরুরি প্রয়ােজন ছাড়া ঘর/বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না।
২) জরুরি প্রয়ােজনে বাইরে যেতে হলে মাস্ক পরিধান আবশ্যক।
৩) খাবারের দোকান/হােটেল/রেস্তোরাঁয় সকাল ৮.০০ ঘটিকা হতে রাত্র ৮.০০ ঘটিকা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (অনলাইন/টেক অ্যাওয়ে) করা যাবে।
৪) জরুরি সেবা হিসেবে ঘােষিত সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধুমাত্র প্রয়ােজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) জনগণকে মাস্ক পরার জন্য গণমাধ্যমসহ সকলকে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে হবে।৬) কাঁচাবাজার উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা) খােলা থাকবে।
৭) ঔষধ ক্রয় ও কাঁচা বাজার করার জন্য নাগরিকগণ যানবাহন হিসেবে শুধুমাত্র রিকশা ব্যবহার করতে পারবেন।
৮) আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীরা পাসপাের্ট, টিকেট প্রদর্শন করে যাতায়াত করতে পারবেন।
৯) আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন: কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া)।
আরও চালু থাকবে বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবেন।
১০) টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
কঠোর বিধিনিষেধে যা যা বর্জনীয়:
১) অপ্রয়ােজনে বাইরে বের হওয়া পরিহার করতে হবে।
২) সকল ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখতে হবে। তবে পণ্য পরিবহণ, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযােজ্য হবে না।
৩) সকল শপিংমল/মার্কেট/পর্যটন কেন্দ্র/রিসাের্ট/কমিউনিটি সেন্টার ও বিনােদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৪) হােটেল/রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া যাবে না। কোন হােটেল/ রেষ্টুরেন্টে এর ব্যত্যয় দেখা গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫) জনসমাগম হয় এ ধরনের কোন সামাজিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
৬)মহল্লা/অলিগলিতে চায়ের দোকান/পান-বিড়ির দোকান বন্ধ থাকবে। কোন ধরনের আড্ডা/গণজমায়েত করা যাবে না।
কঠোর বিধিনিষেধে বাংলাদেশ পুলিশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সেগুলো হলো:
১) ঢাকা মহানগরীর প্রধান সড়ক সমূহ ও অলিগলিতে পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা।
২) ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ/বাহির পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহে চেকপােস্ট ব্যবস্থাপনা জোরদার করা।
৩) বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের ডিএমপি অর্ডিন্যান্স অনুসারে গ্রেপ্তার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪) ক্ষেত্র বিশেষে ট্রাফিক আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫) আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ২৬৯ ধারা অনুসারে গ্রেপ্তারসহ নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে।
৬) মহানগরী এলাকায় নিয়মিত মােবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহায়তা করা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ২১টি শর্ত যুক্ত করে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ইই/ কবিনিষে ১ জুলাই, ২০২১