‘র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, দেশ রক্ষায় কাজ করে’
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, দেশ রক্ষায় কাজ করে থাকে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে একটি চুরির ঘটনা নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান সাত র্যাব কর্মকর্তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় নিজেদের আত্মরক্ষায় গোলাগুলি করতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদসহ এখন পর্যন্ত ২৮ জন সদস্য মারা গেছেন। অঙ্গহানী হয়েছে ১ হাজারের বেশি সদস্য। আহত হয়েছেন ২ হাজারের বেশি সদস্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এসব ঘটনার পাশাপাশি জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে মোট ৪২১ অপরাধী আত্মসমর্পণ করেছেন র্যাবে। তারা এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। তাদের সবাই পরিবারের সঙ্গে ভালো আছেন।
আত্মসমর্পণ সুযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, র্যাবের এমন মানবিক আত্মসমর্পণের সুযোগ বিশ্বের কোনো বাহিনী দেয়নি। বিশ্বের এমন কোনো ফোর্স নেই, যাদের ৯ হাজার সদস্যের মধ্যে, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার রক্ষায় এমন আত্মত্যাগ রয়েছে। তাই বলতে চাই, র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সত্য নয়। এখন পর্যন্ত র্যাবের মতো মানবিকতা বিশ্বের খুব কম বাহিনীই দেখিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, দেশ রক্ষায় কাজ করে র্যাব।
তিনি বলেন, বিশ্বে এমন কোনো ফোর্স নেই, যার সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার। আমি যে পরিসংখ্যান দিলাম, দেশের আইন শৃঙ্খলা মানবাধিকার রক্ষার্থে এভাবে আত্মত্যাগ করেছে কি না, আমার সন্দেহ রয়েছে।
ভবিষ্যতেও র্যাব মানবাধিকার রক্ষায় জীবন দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে জানিয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা বলবো, র্যাবের মতো মানবিকতা বিশ্বের খুব কম বাহিনীই দেখিয়েছে! র্যাবে মানবাধিকার লুণ্ঠন করে না, র্যাব মানবাধিকার রক্ষা করে। মানবাধিকার রক্ষায় জীবন দিয়ে কাজ করছে র্যাব।
যুক্তরাষ্ট্রে র্যাব কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে অফিসিয়ালি এখনো কোনো কিছু জানি না। অফিসিয়াল কোনো চিঠি না পাওযার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারছি না। চিঠি পাওয়ার পর আমরা এই বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
তিনি প্রশ্ন রেখে জানান, এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে যা কিছু জেনেছেন, তার সবই গণমাধ্যম থেকে পাওয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাবে। তবে আমরা বলবো, র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, মানবাধিকার রক্ষা করে চলছে।
বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, গুলিবিনিময়ের যে ঘটনা বা ক্রসফায়ার আমরা বলে থাকি; আমরা মনে করি একটি দেশের সুস্থ বা স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে নিজের আত্মরক্ষার যে অধিকার এটা কিন্তু দেশের আইন দিয়েছে। মাদক, জঙ্গি দমনের অভিযানে আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন অভিযানে যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আমরা যখন প্রতিরোধের শিকার হয়েছি বা আমাদের ওপর যখন সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে তখনই আমরা গুলি করেছি। এই গুলি বিনিময়ে আমাদের এখন পর্যন্ত ২৮ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় সেখানে নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই করা হয় এই গুলি বিনিময় যথার্থ ছিল কি না। যদি যথাযথ না থাকে, তাদের বিরুদ্ধে র্যাব যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
‘প্রতিটি গুলিবর্ষণের ঘটনার নির্বাহী তদন্ত হয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কেউ ভুল করে থাকেন, তাহলে র্যাব কঠোর ব্যবস্থা নেয়। যারা আইন ভঙ্গ করে, নিয়ম ভঙ্গ করে তাদের বিরুদ্ধে র্যাব সবসময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সুন্দরবনের দস্যুমুক্তের কথা উল্লেখ করে র্যাব মুখপাত্র বলেন, এরই মধ্যে র্যাবের উদ্যোগে সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, আপনারা বলেছেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয়েরা বলেছেন, আজকে র্যাবের আভিযানিক সাফল্যের কারণে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ (উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চলে) যে চরমপন্থীরা ছিল এটা কিন্তু প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। মূলত র্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে।
র্যাব সুন্দরবন দস্যুমুক্তের তৃতীয় বর্ষ পালন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, খুব কম দেশেই এমন নজির রয়েছে যে, সুন্দরবনের মতো একটা বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল দস্যুমুক্ত হয়েছে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত কিভাবে হয়েছে তা জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে গুলি বিনিময় হয়েছে। এটাও দেখেছেন সুন্দরবনে ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন আত্মসমর্পণ করেছে। এক্ষেত্রে র্যাব যে মানবিকতা দেখিয়েছে, আমরা তাদের ঘর দিয়েছি, গরু দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের পুনর্বাসনে যা যা করা দরকার আমরা তাই করেছি। বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় যে জলদস্যু রয়েছে তারাও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বের কম বাহিনী রয়েছে যারা এমন নজির রেখেছে। এখন পর্যন্ত ৩৬টি বাহিনীর ৩২৬ জন আত্মসমর্পণ করেছেন।
জঙ্গিবাদ দমনেও র্যাব সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৬ জন জঙ্গি সদস্য র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাঁদের পুনর্বাসনেরও উদ্যোগ নিয়েছে র্যাব।
র্যাবের তথ্যমতে, আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে সুন্দরবনে ৩২৮ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে ৭৭ জলদস্যু এবং ১৬ জঙ্গি রয়েছেন। বিভিন্ন বাহিনীর চৌকস সদস্যদের নির্বাচন করে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বাহিনীতে আনা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাহিনীর নিজস্ব যে আইন বা নিয়ম রয়েছে তা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়।
ইবাংলা / এইচ / ১২ ডিসেম্বর, ২০২১