আজ বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে আজ, বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ, বহু জাতি দাসত্ব ও পরাধীনতার শেকল পরে আছে এবং তারা যুদ্ধ করে যাচ্ছে বছরের পর বছর, কিন্তু বিজয়ের মুখ দেখছে না, স্বাধীনতার সুখ তারা পাচ্ছে না। আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু ছিলেন বলেই হাজার বছরের পরাধীন এ জাতি আজ স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পেরেছে।
এবার বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী বা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপনও এই বছর অব্যাহত আছে বলে উল্লেখ করেন একাত্তরের রণাঙ্গণের এই বীর সেনানী জনাব মোস্তাফা জব্বার। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই বিজয় অর্জিত হয়েছে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদ্বয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লক্ষ মা-বোনের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।
ষাটের দশকে স্বাধীনতা আন্দোলন – সংগ্রামে রাজপথের লড়াকু এই সৈনিক বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ’৪৮-এ বাংলা ভাষার আন্দোলনের পথ বেয়ে ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের ৬-দফার আন্দোলন।
৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান,’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।
তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের পথ বেয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একটি জনযুদ্ধে রূপ নেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার, স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশ গ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন যারা যুদ্ধে গিয়েছিলাম ফিরে আসার জন্য যাইনি। মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে গিয়েছিলো। বস্তুতপক্ষে ৭ মার্চের পর থেকেই যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছিলো। তিনি বলেন, চিহ্নিত কিছু স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া এদেশের জনগণ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে এবং তথ্য দিয়েছে। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া যুদ্ধে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময় এ দেশে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে।
১৯৮১ থেকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান প্রদানের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে অভাবনীয় অগ্রগতির মাইলফলক স্থাপন করেছে। করোনাকালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর তুলনায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা সচল সজীব রাখতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মন্ত্রী তার এলাকায় ৮ মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় মুক্ত রাখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হাওরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতি দাস ও তার সহযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি জানান যে তার পাশের থানা সুনামগঞ্জের শাল্লার লুটেরা, ঘাতক ১৬১ জন রাজাকার ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে যাদেরকে পরদিন শাল্লার মুক্তিযোদ্ধারা তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডও প্রদান করে এবং ৮০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। স্বাধীন দেশে পাকিস্তানী দালাল ও লুটেরাদের এমন শাস্তিপ্রদান সেটাই প্রথম বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ইবাংলা/টিপি/১৬ ডিসেম্বর, ২০২১