রাজাকারের সন্তানদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া দুঃখজনক ও বিব্রতকর। এ বিষয়টি দলকে অবগত করা হবে। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে এ কথা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাইনি, পেয়েছি কলঙ্ক, বঙ্গবন্ধুর আমলে এ স্বীকৃতি মিলেছে। ভাতের অভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষ মারা যায়নি। মানুষের আয়ের পরিবর্তন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সম্মান জনক অবস্থান ও জীবনমান বৃদ্ধি করেছে। বীরের কন্ঠে বীর গাঁথা প্রকল্পের আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প রেকর্ড করা হবে।
ভূতের মুখে রাম নাম শুনি, তাদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে, এটা হাস্যকর বটে। আগামী স্বাধীনতা দিবসের আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেয়া হবে মুক্তিযুদ্ধ স্মার্ট কার্ড। সেই সাথে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে স্কুল পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গল্প শোনাতে অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
অপারেশন জ্যাক পট, পাক হানাদারদের পরাজিত করার ইতিহাস নিয়ে সিনেমা তৈরি করা হয়েছে এবং এ ইতিহাসকে ধরে রাখতে আরও সিনেমা তৈরি করা হবে। ২৩ বছরের মুক্তি সংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি।
তিনি ১৭১ জন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর তুলে দেয়া হবে। কৃতিত্ব ফলাতে নয়, জনগণের সেবক হতে হবে সরকারী চাকুরীজীবিদের। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলারও আহ্বান জানান মন্ত্রী।
১৯৭১ থেকে ২০২১ স্বাধীনতার ৫০ বছর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বাঙালি জাতি উদযাপন করল মহান বিজয় দিবস-২০২১।
বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বরগুনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক ১৬ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ তিন দিনব্যাপী এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস-২১ এর শুভ সূচনা করা হয়। ওই দিন বিকাল ৪ টায় দেশব্যাপী জাতীয় কর্মসূচির আলোকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমগ্র জাতির শপথগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বরগুনায় সার্কিট হাউজ ময়দানে সর্বস্তরের সকল শ্রেণী-পেশার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ একযোগে শপথ গ্রহণ করেন।
১৬ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ বিজয় মেলা-২১ এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় ও অতিথি শিল্পীদের অংশগ্রহণে চলছে বর্ণাঢ্য লোক সংস্কৃতি উৎসব। সেই সাথে আঞ্চলিক গান, বাউল গান, যাত্রাপালা ও বর্ণিল আতশবাজি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৮ ডিসেম্বর দিনব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি শনিবার সকাল ১০ টার দিকে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী ফ্রী হেলথ ক্যাম্প কার্যক্রমের সূচনা করেন। এর পরপরই সার্কিট হাউজ ময়দানে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সুবর্ণজয়ন্তীর বিস্তারিত কর্মসূচির মধ্যে জেলার ১২৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার বর্গকে সংবর্ধনা ক্রেস্ট প্রদান করেন।
১০০ জন অসুস্থ বীরমুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, ১০০ জন আর্থিকভাবে অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সহায়তা প্রদান, ১০০ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন, ১০০ জন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের পুরস্কার প্রদান, বৃক্ষরোপণ এবং ৫০ হাজার ফলদ-বনজ-ওষুধি গাছের চারা বিতরণ করেন।
এর আগে তিনি বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন।
এ সময় সাথে ছিলেন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নাদিরা সুলতানা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন, সাবেক বরগুনা পৌর মেয়র ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, আব্দুল মোতালেব মৃধা, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রশিদ মিয়া, বরগুনা পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান মহারাজসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বরগুনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হাবিবুর রহমান। এ সময় জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য প্রদানকালে অবসরপ্রাপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব এনায়েত উল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এখনো গেজেটভুক্ত হয়নি স্বীকৃতি।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বীরদর্পে প্রকৃত সনদ বাতিল করে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা যারা আমার সাথে ক্যাম্পে ছিল, তারা দিনের পর দিন না খেয়ে রয়েছে, যুদ্ধ করেছে, তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয় নাই। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তিনি মন্ত্রীর সাথে দেখা করে দিবেন বলেও জানান। এ সময় সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রশিদকে উত্তেজিত হতে দেখা গেছে।
ইবাংলা /টিআর/১৮ ডিসেম্বর