১৭ বছর পর জেলা যুবলীগের সম্মেলন!

গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা

বরগুনা এখন ফেস্টুন ব্যানারের শহরে পরিনত হয়েছে। এ জেলা শহরের যে দিকে তাকাই সেদিকেই ব্যানার আর ফেস্টুন দেখা যায়। অপর দিকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামী ২১ শে ডিসেম্বর জেলা যুবলীগের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

পদ প্রত্যাশীতদের নিয়ে জেলার সর্বত্রজুড়ে চলছে আলোচনা, পদ বঞ্চিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পদ প্রত্যাশিরা পদ পেতে মরিয়া। লোবিং,গ্রুপিং ও দৌড়ঝাপ চলছে তাদের। ঘুরে ফিরে গুরুত্বপূর্ন পদে নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

জানা যায়, ২০০৫ সালে সর্বশেষ জেলা যুবলীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ সভাপতি ও সাহাব উদ্দিন সাবু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ দীর্ঘ বছর পর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের তোসামত,লোবিং গ্রুপিংয়ে এগিয়ে এবারের সম্মেলনে কারা হবেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। রয়েছে অন্যান্য পদ নিয়েও প্রতিযোগিতা।

২১ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ বরগুনা জেলা শাখায় এবার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। আর এ উপলক্ষে বরগুনা শহরের সড়ক ও মহাসড়কে ছেয়ে আছে নেতৃত্বে আসতে চাওয়া পুরাতন ও নতুন নেতাদের ফেস্টুন ব্যানার।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি সম্বলিত ছোট-বড় ফেস্টুন ও বিলবোর্ড তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রিন্টিং প্রেস ও কাঠ মিস্ত্রী। জেলার প্রবেশ পথে রাস্তার আইলেনের মাঝে থাকা গাছেও স্থান পেয়েছে এসব ফেস্টুন।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ২৬ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জেলা যুবলীগে নুতন পদ প্রত্যাশীদের কাছে থেকে জীবন বৃত্তান্ত চাওয়া হয়। এ চার দিনে কেন্দ্রে বরগুনার ২৪০ জনের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

গত ১লা ডিসেম্বর বরগুনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন নিখিল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২১ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করে, সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।

জেলা যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, এবার নুতন কমিটির শীর্ষ দুই পদ প্রত্যাশীর অনেকেই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যায় এরা হলেন, বর্তমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম এ্যাটম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

এদের মধ্যে সাহাবুদ্দিন সাবু ছাত্রজীবনে কলেজ ও জেলা ছাত্রলীগের পদে ছিলেন। এরপর তিনি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন। ২০০৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ। ২০১০ সাল পর্যন্ত ওই কমিটির তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর অনেকটা বছর পার হলেও জেলা যুবলীগের কমিটি না হওয়ায় তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। রেজাউল কবির এ্যাটম ২০০৫ সালের কমিটিতে জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

জেলা যুবলীগে সভাপতি পদ প্রত্যাশী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে যুব রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অপেক্ষায় দীর্ঘ বছর কেটে গেছে,এবারের সম্মেলনে আমি যোগ্য পদ পাবো বলে আশা করছি।

সহ-সভাপতি রেজাউল করিম এ্যাটম বলেন, আমি দায়িত্ব চাই। পদ পেলে ঝিমিয়ে পড়া যুবলীগকে আবার সক্রিয় করে তুলব।

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা যুবলীগের সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুল আজাদ রিপন, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সরিষামুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপন, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন মোল্লা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুনাইদ জুয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা শাওন তালুকদার, মাহমুদুল বারী রনি, রানা তালুকদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসাইন রাসেল ফরাজি, সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান রকিব, জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকসহ অনেকে।

এদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ইমরান হোসেন রাসেল ফরাজি বরগুনানজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার জামাই। তাই তিনি বিএনপি সভাপতির মেয়ে বিয়ে করে জেলার সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে।

বরগুনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, আমি দীর্ঘ বছর এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছি। আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যুবলীগ। আমি চাই এই সংগঠনে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারাও একইভাবে সংগঠনকে ভালোবেসে এর সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করবেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, যুবলীগ একটি আদর্শবাদী সংগঠন। এখানে লবিং বা তদবির কোনো কাজে আসবে না। যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচিত করা হবে। হাইব্রিড ও বিতর্কিতদের দল করার কোনো সুযোগ নেই। ত্যাগী, যোগ্য ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন নেতৃত্বই আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে।

ইবাংলা /টিআর/১৯ ডিসেম্বর

Contact Us