খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফসর ড. মোঃ সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ৪৪ শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। কুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিষদ থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) এ শোকজ নোটিস দেয়া হয়।
কুয়ট ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক প্রফেসর ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নাম আসা শিক্ষার্থীদেরকে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে এই শোকজের জবাব ছাত্র কল্যাণ পরিচালক বরাবর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ই-মেইল বা ডাকযোগে শোকজের জবাব দিতে পারবে।
প্রসঙ্গতঃ গত ৩০ নবেম্বর কুয়েটের প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু মানসিক নির্যাতনে হয়েছে এমন দাবি ওঠে শিক্ষক এবং সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ থেকে। শিক্ষকরা আন্দেলনের ডাক দেয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ২ ও ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৭৬তম জরুরী সভায় ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম ও সকল হল বন্ধ ঘোষণা, ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
এর পর ৭৭তম সভার ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্বেরবর্ধিত করা হয় এবং ২৩ ডিসেম্বর ৭৮তম সিন্ডিকেট সভায় ৭ জানুয়ারি হল খুলে দেয়া ও ৯ জানুয়ারি একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি ২৯ ডিসেম্বর ৪৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৪ জন শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। সূত্র মতে শোকজের জবাব পাওয়ার পর তা ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহবান ও সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এরপর ওই সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় অবহিত করা হবে।
শিক্ষক ও ছাত্রদের অভিযোগ, কুয়েট ছাত্রলীগের সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান ও তার সঙ্গীরা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ডায়নিং ম্যানেজার নির্বাচন করার জন্য হল প্রোভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তারই অংশ হিসেবে সাদমান নাহিয়ান সেজান তার লোকজন নিয়ে ৩০ নবেম্বর ড. মোঃ সেলিমের দাফতরিক কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষকের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও তাকে মানষিক নির্যাতন করেন। এর ফলে শিক্ষক প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেন (৩৮) ৩০ নবেম্বর বিকেল ৩টায় ইন্তেকাল করেন। অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন ও সিসি ফুটেজ দেখে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।
এদিকে মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য দাফনের ১৫ দিন পর ১৫ ডিসেম্বর সকালে কুয়েট শিক্ষক সেলিম হোসেনের লাশ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। এরপর মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য লাশ ঢাকায় পাঠানো হয়। ১৬ ডিসেম্বর রাতে ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে লাশ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগামে ওই একই কবরে দাফন করা হয়।
ইবাংলা / নাঈম/ ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১