আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে হুথি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলায় তিন জন নিহতের ঘটনার একদিন না পেরোতেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ইয়েমেনের রাজধানী সানায় চালানো বিমান হামলায় তারা প্রাণ হারান। নিহতরা সবাই একই ভবনের বাসিন্দা। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
আরও পড়ুন: হুথি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলায় নিহত ৩
এর আগে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ড্রোন হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এতে তিনজন নিহত হন। নিহতদের দু’জন ভারতীয় এবং অন্যজন পাকিস্তানি নাগরিক। এই হামলার জবাবেই মঙ্গলবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় সৌদি জোট বিমান হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ইরানপন্থি হুথি বিদ্রোহীদের ঘাঁটিসহ বিভিন্ন অবস্থানে বিমান হামলা শুরুর কথা জানায় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট।
রয়টার্স বলছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোরে চালানো এই হামলায় ১৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানা গেছে। সানার অন্যান্য স্থানের মতো সাবেক একজন সামরিক কর্মকর্তার বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। সৌদি জোটের বিমান হামলায় সাবেক ওই সামরিক কর্মকর্তা, তার স্ত্রী, তাদের ২৫ বছর বয়সী সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্য এবং অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
তবে রাজধানী সানায় সৌদি জোটের হামলায় প্রায় ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন হুথি নিয়ন্ত্রিত সরকারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যদিকে হুথিদের পরিচালিত আল মাসিরাহ টিভিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত এবং প্রায় আরও এক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন।
অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেন ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। বিদ্রোহী বাহিনী দেশটির কেন্দ্রীয় শহর মারিব এবং উপকূলীয় শহর হোদেইদাকে টার্গেট করেছে। অন্যদিকে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট রাজধানী সানা এবং অন্যান্য বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিমান হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ।
ইবাংলা /টিপি/ ১৮ জানুয়ারি, ২০২২