দেশে মাদকাসক্ত নিরাময়ের আড়ালে নির্যাতন

আমিনুল ইসললাম, ঢাকা

নেই আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, ঘরের জানালা বলতে টিনকাটা ফোকর। তার মধ্যেই রান্না ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। চিকিৎসক নেই, নেই চিকিৎসা সরঞ্জাম, রোগীরা ঘুমায় মেঝেতে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এটি একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধসংলগ্ন ঢাকা উদ্যানে এ কেন্দ্রটির নাম ‘নিউ তরী’। এর পাশে ‘জীবনের আলো’ ও ‘ফিউচার’ নামের আরও দুটি কেন্দ্রেরও একই চিত্র।

Islami Bank

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরে ৬ শতাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে। এগুলোকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে কেউ কেউ সমাজসেবা অধিদফতর বা ঢাকা সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে সনদ নিয়ে কেন্দ্র পরিচালনা করছেন। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসা সুবিধা বলতে কিছু নেই। আছে অভিযোগ আর অভিযোগ—চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, মাদকের ব্যবসা পরিচালনা ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় মূল টার্গেট।

দেশের বিভিন্ন জেলায়,এসব কেন্দ্রের চিত্র আরও ভয়াবহ। জানা গেছে, গাজীপুরের ভাওয়াল মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার আড়ালে চলত মাদক ব্যবসা,মাদকাসক্তদের উপর চালানো হতো নির্যাতন।এসব অভিযোগে ওই কেন্দ্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ ছাড়া সেখান থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেতা অনিক রহমান অভিসহ ২৮ জনকে উদ্ধার করে।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফিরোজা নাজনিন বাঁধন, মনোয়ার হোসেন সিপন, রায়হান খান, দিপংকর শাহ দিপু ও জাকির হোসেন আনন্দ। এ সময় ৪২০টি ইয়াবা, নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্টিলের পাইপ, হাতকড়া, রশি, গামছা, খেলনা পিস্তল এবং কথিত সাংবাদিকের পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।

বিশেষ করে তিনটি রুমে ২৮ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হতো। বিভিন্ন সময় সেবা নিতে আসা রোগীদের মারধর করা ছাড়াও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করত। কিন্তু পরিবারগুলো থেকে প্রথমে ভর্তি ফি ৩ লাখ এবং প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু এত টাকা নেওয়া হলেও সেবার মান ছিল খুবই নিম্নমানের। একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে রংপুরে মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য রংপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণও নেই।

one pherma

স্থানীয়রা জানান, “প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র” নামে বিশেষায়িত এই চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রায়ই ভেসে আসে রোগীর কান্নার আওয়াজ। কখনো কখনো রাতে গগণবিদারী কান্নায় ঘুম ভেঙে যায় তাদের। লোহার পাইপ দিয়ে এক রোগীকে মারপিট করার খবর পেয়ে ওই রোগীর কয়েকজন স্বজন “প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নামে ওই প্রতিষ্ঠানে যান। এ সময় প্রায় সব রোগী চিকিৎসার নামে নিজেদের ওপর চলা শারীরিক নির্যাতনের ফলে সৃষ্টি হওয়া ক্ষত দেখিয়ে উদ্ধারের আঁকুতি জানায় ।

প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়রা প্রবেশ করলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। তারা দেখতে পান, সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওপর চলছিল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যে পাশবিকতা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করতে থাকেন ভারসাম্যহীন মাদকাসক্ত রোগীরা। এ রকম হাজারও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অবস্থা প্রায় একই রকম। তবে ভালোও রয়েছে।

যেমন,কেরানিগন্জ ঘাটারচরে লাইফ সেফ হাসপাতোলের চিকিৎসা খুবই ভাল। খোজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে নারী ও পুরুষ মাদকোসক্তকে পুষ্টিকর খাবার,বায়াম,নিয়মিত চেকাপ করাসহ নানা সুবিধা দিয়েছে। খেলার ব্যবস্থা রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান,সেবার মান নিয়ে এগিয়ে এসেছি যুব সমাজকে রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের। বাংলাদেশে মাদকের চাহিদা আছে তাই সরবরাহও আছে৷ কিন্তু সরবরাহ বন্ধ করা না গেলে চাহিদা বাড়তেই থাকবে৷ আর বাংলাদেশকে মাদক পাচারের রুট হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে৷

২০১৫ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি তরল কোকেনের চালান ধরা পড়ে৷ খানজাহান আলি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় বলিভিয়া থেকে আসা একটি কন্টেনারে ১০৭ ড্রাম সানফ্লাওয়ার তেলের মধ্যে দুই ড্রাম তরল কোকেন পাওয়া যায়৷ পরে ল্যারেটরি টেস্টেও কোকেনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ৷ এই ঘটনায় দায়ের করা মাদক আইনের মামলাটি এখন আদালতে বিচারের অপেক্ষায় আছে৷ বাংলাদেশে কোকেন সংক্রান্ত অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ৷

ইবাংলা /আমিন/ ১৮ জানুয়ারি

Contact Us