নায়িকা শিমুকে হত্যায় স্বামীর সংশ্লিষ্টতার দাবি পুলিশের
ইবাংলা ডেস্ক
চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী ও তার বাল্যবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে স্বামীর সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শিমু হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সময় একটি প্লাস্টিকের দড়ির সূত্র ধরে রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। নিশ্চিত হওয়ার পরই শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের তদন্ত সূত্র জানায়, শিমুর মরদেহ উদ্ধারের পর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তার পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে।এ সময়ই একটি প্লাস্টিকের দড়ির সূত্র ধরে উদঘাটন হয় হত্যার মূল রহস্য।
মরদেহ গুম করতে বস্তা দুটি যে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই দড়ির হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি শিমুকে হত্যা করেছেন। ১৬ জানুয়ারি (রোববার) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে আনেন।
পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর মরদেহ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান। প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে মরদেহ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন।
পরে ঐদিন সন্ধ্যায় আবার তারা মরদেহ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের দিকে যান। সেখানে রাত সাড়ে নয়টার দিকে কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর মরদেহটি ফেলে চলে যান।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার অভিনেত্রী শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ দুজনই মাদকাসক্ত ও বেকার। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। মরদেহ গুমের সহযোগিতার জন্য বন্ধু ফরহাদকে ডেকেছিলেন তিনি।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় গ্রেফতার দেখানো নোবেল ও ফরহাদকে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তাদের দুইজনের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, চিত্রনায়িকা শিমু ১৯৯৮ সালে সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তাকে নিয়মিত বড় পর্দায় দেখা গেছে। প্রথম সারির পরিচালকদের সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শিমু। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে শিমু রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন শিমু। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যামিলি ক্রাইসিস নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন। ২৩টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি।
ইবাংলা /এইচ/১৮ জানুয়ারি, ২০২২