বসন্ত মানেই একগুচ্ছ কবিতা, গান, ভালোবাসার পঙক্তিমালা। বসন্ত মানেই মনকে আন্দোলিত করা সুন্দরের আহ্বান। মনমোহিনী মুগ্ধতা ছড়িয়ে বসন্ত এসেছে ভালোবাসাকে সঙ্গে নিয়ে। চারপাশে সাজসাজ রব। হৈ-হুল্লোড় আর রঙের ছটা! সহজভাবে বললে, আজ ফাল্গুনের প্রথম দিন। আর মনের মন্দিরে প্রিয়জনের নামটি ভালোবেসে লেখার দিনটিও আজকেই—বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
ভালোলাগা আর ভালোবাসার প্রবৃত্তি মানুষের সহজাত। কিন্তু সহজাত এই প্রবৃত্তি প্রকাশ করায় জীবনও দিতে হয়েছে অনেককে। তাই জন্মসূত্রে পাওয়া ভালোবাসা নামের সেই অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যাদের জীবন দিতে হয়েছে তাদের মহিমান্বিত করতেই প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস।
তবে প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রয়ারিই কেন ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ভালোবাসার জন্য এই দিনে মানুষের জীবন ত্যাগের ইতিহাস।
এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ইতিহাসটি হচ্ছে রোমের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। তিনি ছিলেন মানবপ্রেমিক ও খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। সেই থেকেই দিনটির শুরু।
তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝেও ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। ভালোবাসার উৎসবে মুখর আজ রাজধানী। এ উৎসবের ছোঁয়া লাগবে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় হয়ে উঠবে পল্লবিত। অনেকের মতে, ফেব্রুয়ারির এ সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে বাসা বাঁধে। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠে। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুল সৌন্দর্যবিভায়। পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেমবার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, জড়াজড়ি করা খেলনা মার্জার অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেয়া হয়।
নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু`ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে উপহারের অনুষঙ্গ।
অন্যদিকে আজকের এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারে সবাই। চলবে উপহার দেয়া-নেয়া।
ইবাংলা/ নাঈম/ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২