যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে ব্যবসার বিরাট বাজারের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে দিব্যি লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তবে অনলাইনে ব্যবসায় এখনো অধিকাংশ মানুষের সন্দেহ বিরাজমান। এছাড়া অনলাইনে ব্যবসার নিয়মকানুন নিয়েও অনেকে সন্দেহের মধ্যে থাকে। সেজন্য অনেকেই অনলাইন বিজনেস সিস্টেম বা অনলাইনে পণ্য বিক্রি করার নিয়মকানুন জানতে চায়। তাছাড়া অনেকেরই অনলাইনে ব্যবসা করার আইডিয়া থাকলেও সঠিক ধারণা থাকে না। যদি ইকর্মাস ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে বাংলাদেশের ডিজিটাল কর্মাস পলিসিটি সম্পর্কে জেনে নেওয়াই উত্তম। অনলাইনে ছোট ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করে সহজেই সফলতা অর্জন করা যেতে পারে।
ব্যবসা বাছাই করুন বাজার চাহিদার উপর: বেশিরভাগ মানুষই পণ্য ও বাজার নিয়ে রিসার্চ করতে ভুল করে। ব্যবসায় সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য বাজার যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সেটা নির্বাচন করা জরুরি। খুঁজে বের করতে হবে কোন মানুষ কি খুঁজছে এবং তাদের চাহিদা। কাজটা করা জটিল মনে হলেও, অনলাইনে এই ধরণের বাজার গবেষণা খুবই সহজ। যেমন: বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে (পেজে, গ্রুপে) যান। সেখানে যাচাই করুন মানুষ কি ধরনের প্রশ্ন করে এবং কি ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। আরেকটি উপায় হলো, কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করা। রিসার্চ করে জানুন, মানুষ কি ধরনের কি-ওয়ার্ড বেশি অনুসন্ধান করেন। এছাড়া আপনার সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের সাইটে, পেজে, গ্রুপে গিয়ে তাদের ভিজিট করুন। দেখুন, জানুন গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ ও গ্রাহক চাহিদা অনুসন্ধানের জন্য কি কি করছেন তারা। কিংবা কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন। প্রতিটি বিষয় নোট করুন। তারপর রিচার্জের ফলাফলের উপর নির্ভর করে একটি পণ্যের লিস্ট তৈরি করুন।
বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ: কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনি পণ্য দেখতে আসা গ্রাহকদেরকে ক্রেতাতে পরিণত করতে পারেন। যেমন: একটি আকর্ষণীয় ও শক্তিশালী শিরোনাম দেওয়া। আপনার পণ্য বা সেবাটি গ্রাহকের যে সকল চাহিদা পূরণ করবে তার বর্ণনা দেওয়া। লোকের কাছে আপনার পণ্যটির বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপন করা। আপনার পণ্য যারা ব্যবহার করেছেন তাদের কাছ থেকে পণ্যের রিভিউ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা। পণ্য বা সেবাটি ব্যবহার করে ভোক্তাগণ কিভাবে উপকৃত হবেন সে বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া। কখনো কখনো প্রয়োজনে বিশেষ অফার চালু করা। পণ্যটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গ্রাহকদেরকে অবগত করা ইত্যাদি।
ওয়েবসাইট তৈরি করুন: পণ্যের বাজারজাত ও পণ্য নির্বাচন করার পর আপনার ওই ধাপটি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আপনার আসল কাজ এখনো বাকি। অর্থাৎ আপনার কাছে ৫ সেকেন্ডেরও কম সময় থাকবে ওয়েবসাইটে একটি গ্রাহককে আকর্ষণ করার জন্য। আর যদি উক্ত সময়ের মধ্যে আপনি ব্যর্থ হন তবে একটি সম্ভাব্য ক্রেতা হারাবেন। আর ঠিক এই জন্যই ওয়েবসাইট ডিজাইনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে পারেন। যেমন: যতটা সম্ভব তথ্যবহুল করার চেষ্টা করা এবং পণ্য সংক্রান্ত ব্যতীত অতিরিক্ত তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকা। ন্যাভিগেশন যতটা সম্ভব স্পষ্ট এবং সহজ-সরল রাখা এবং ওয়েবসাইটের প্রতিটি পৃষ্ঠা একরকম রাখার চেষ্টা করা। গ্রাফিক্স, অডিও বা ভিডিও ব্যবহার করুন এতে তথ্যর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। ক্যাম্পেইন অফার যুক্ত করুন যাতে করে আপনি গ্রাহকের ইমেইল সংগ্রহ করতে পারেন। পণ্য ক্রয়ের ধাপগুলো অত্যন্ত সহজ করুন যেন গ্রাহক দুটো ক্লিকের মাধ্যমে পণ্যটি ক্রয় করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটটি একটি অনলাইন স্টোর-ফ্রন্ট, তাই এটিকে গ্রাহকবান্ধব করার চেষ্টা করুন।
ওয়েবসাইট র্যাঙ্কিংয়ে রাখুন: মানুষ তথ্য খুঁজতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আপনার সাইটে বিনামূল্যে সেই তথ্য সরবরাহ করুন। এতে করে আপনি আরও বেশি ট্র্যাফিক এবং সার্চ ইঞ্জিনও আপনার ওয়েবসাইটকে র্যাঙ্কিংয়ে দেখতে পাবেন। মূলকথা হলো সর্বদা সার্চ হয় এমন কিছু তথ্যবহুল আর্টিকেল ওয়েবসাইটের সাথে অন্তর্ভুক্ত করুন। যেন মানুষজন সেগুলো লিখে সার্চ দিলেও আপনার ওয়েবসাইটে চলে আসে। শুধু আর্টিকেলই নয় বিভিন্ন মজার তথ্যবহুল ভিডিও আপলোড করতে পারেন। এছাড়া সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচিত-অপরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের কাছে ছড়িয়ে দিন। তাহলে ওয়েবসাইটের প্রচারের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পাঠক বা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবেন।
ইমেইল মার্কেটিং করুণ: ওয়েবসাইটের ভিজিটরকে ক্রেতায় পরিণত করতে ইমেইল মার্কেটিংয়ের সহায়তা নিতে পারেন। একটি অনলাইন ব্যবসায় সব চাইতে মূল্যবান হল গ্রাহকদের ইমেইল। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারবেন সহজেই। কেননা এই উপায়েই প্রতিনিয়ত গ্রাহকদেরকে আপনার নতুন পণ্য সম্পর্কে অবগত করতে পারবেন।
ডিজিটাল মাকেটিংয়ে গুরুত্ব: অনলাইন ব্যবসা করতে গেলে ডিজিটাল মাকের্টিং ছাড়া সফলতা প্রায় অসম্ভবই। যদি পণ্যের সেল বৃদ্ধি করতে চান এবং ব্যবসায়কে দ্রুত প্রসার করতে চান তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিকল্প কোন কিছু নেই। এর মধ্যে রয়েছে- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং ইত্যাদি।
ইবাংলা/ এশো/ ১০ মার্চ, ২০২২