উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টের যমুনা নদীর তীরবর্তী নিচু অঞ্চলে রোপন করা স্থানীয় জাতের কালো বরো ধান ক্ষেতে পানি প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে সহশ্রাধিক একর বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজানে পাহাড়ী ঢল শুরু হয়েছে। ফলে যমুনা নদীর অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর কিনারে ও ঢালু পাড়ে লাগানো স্থানীয় জাতের কালো বোরো ধান তলিয়ে গেছে। আরো শতশত একর জমির কালো বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
চরের নদী ভাঙ্গনে অনেক ভূমিহীন, দরিদ্র, গরীব ও অসহায় চাষীরা এই কলো বোরো ধান নদীর ধারে রোপন করেছিলেন। আশা ছিলো ধান উত্তোলন করতে পারলে এ ফসল থেকে লাভবান হওয়ার। সে আশা এখন নিরাশায় পরিণত হয়েছে।
সদর ইউনিয়নের চর বাটিয়া গ্রামের চাষী আনছার আলী বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে এ মৌসুমে কালো বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। ধান ভালোই হয়েছিলো। আর ১০/১২ দিন পরেই পাকা ধান ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু ২বিঘা জমির আধা-পাকা ধান এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। যমুনা নদীতে এবার আগাম ঢলের পানি আসায় আমার সর্বনাশ হয়ে গেলো।
বোহাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশাদুজ্জামান খান বলেন, এ ঢলের পানিতে প্রায় শতাধিক একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আরো প্রায় দুই শতাধিক বিঘার কলো বোরো ধান।
কর্ণিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দিপন বলেন, এ ইউনিয়ন পুরোটাই যমুনা নদীর এলাকায় অবস্থিত। কৃষিই জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম। নিচু এলাকার বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় তিন শতাধিক ধান চাষী এরই মধ্যে ক্ষতির মুখে পরেছেন।
এ ছাড়াও কাজলা ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম ও চালুয়াবাড়ীর চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বলেন, আমাদের ইউনিয়নে দরিদ্র ভূমিহীন চাষীরা চরের পতিত প্রায় তিন শতাধিক একর জমির ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক বোরো ধান চাষী ক্ষতির মুখে পরেছেন। তারা এখন চোখে মুখে শর্ষের ফুল দেখছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার পরিমাপক পরশু রাম চন্দ্র জানান, গত ১৫ দিন যাবৎ যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। নদী শুকিয়ে তলা পানি শূন্য হয়ে পরলেও এখন নদীর অনেক স্থানে ২/৩ ফুট পরিমান পানির প্রবাহ চলছে। এ নদীতে গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ১৫ সে:মি: পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনও বিপদ সীমের অনেক নিচে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: আব্দুর রহমান তাসকীয়া বলেন, উজানে ঢল ও বৃষ্টির কারনে নদীতে পানি বাড়ছে। তবে সহসায় বন্যার সম্ভাবনা নেই যমুনা অববাহিকায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হালিম বলেন, এ এলাকার চাষীরা নদীর অনেক নিচু এলাকায় স্থানীয় জাতের বোরো ধান রোপন করে থাকেন। এ জন্য এ সব নিচু জমিতে লাগানো বোরোধান তলিয়ে গেছে। রোববারের মধ্যে আমরা সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের তালিকা মোতাবেক আমার কৃষি প্রনদনাসহ অন্যান্য সহযোগীতা করা হবে।
ইবাংলা/ টিএইচকে/ ৫ এপ্রিল, ২০২২