ঈদের ছুটিতে চারপাশ নীরব। গ্রীষ্মের প্রখর রোদের উত্তাপের মাঝে সবুজের বুক চিরে উঁকি দিচ্ছে রক্তিম লাল আভা। গাঢ় লাল, কমলা, হালকা হলুদ রঙের ফুলে ভরে গেছে প্রতিটি শাখা। মাঝারি আকারের ডালগুলো নুয়ে আছে। পাখিরা ছুটে বেড়াচ্ছে মন খুলে। লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের আগমনে নয়নাভিরাম সাজে সেজেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) প্রাঙ্গণ।
নোয়াখালী জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনাপুর-সুবর্ণচর সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ১০১ একরের ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের পাশে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুল। দেখলে মনে হবে যেন রঙের মেলা। কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া পাপড়িতে সবুজ ঘাসের ওপর রক্তলাল পুষ্পশয্যা সৃষ্টি হয় যা প্রখর রোদের উত্তাপের মাঝে চোখ জুড়িয়ে নেয়।
হালকা বাতাসে যখন কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলো দোল খায়, তখন হৃদয় ও মনে দোলা দিয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে মনে পড়ে যায় কবি গুরুর লেখা ‘গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে-তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরি’। মনে পড়ে যায় জাতীয় কবির কবিতা ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ এমন পঙতি দিয়ে বোঝা যায় কতটা সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে দান করেছে।
কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। একে গুলমোহর নামেও ডাকা হয়। ফুলের ব্যাস ২-৩ ইঞ্চি। পাপড়ি প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়ে থাকে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট। প্রতিটি পাতা ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা। ২০ থেকে ৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট।ফুলের বহিরাবরণ সবুজ। ভেতরের অংশ রক্তিম। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত।
কৃষ্ণচূড়া গাছ উচ্চতায় খুব বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠে। তবে এর শাখা পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। বহুদূর থেকে দেখলে মনে হয় ওই দূরে আগুন লেগেছে। প্রথম মুকুল ধরার কিছুদিনের মধ্যেই পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। ফুলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো উজ্জ্বল রং। তরুরাজ্যে এত উজ্জ্বল রং সত্যি দুর্লভ। ফুলের পাপড়ির রং গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ, হালকা হলুদ হয়ে থাকে। ফুলের ভেতরের অংশও রক্তিম।
বাংলাদেশে এই কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, এই ফুল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ফোটে থাকে।কৃষ্ণচূড়ার নয়নাভিরাম দৃশ্য আকৃষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে। ছুটে আসেন দর্শনার্থীরাও।
ক্যাম্পাসের নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়ার স্মৃতিচারণ করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলুয়ার হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, গ্রীষ্মের দুপুরে স্বস্তি মেলে লাল কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়। নতুন-রূপ পায় প্রিয় ক্যাম্পাস। দেখলে মনে হয় যেন রঙের মেলা। নয়নাভিরাম এই দৃশ্য উপভোগে থাকে সৌন্দর্য পিপাসুদের ভিড়। ক্যাম্পাসের নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়ার ছবি দেখলে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে অতীতের দিনগুলো।
ইবাংলা / জেএন / ২৭ এপ্রিল, ২০২২