অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় কলেজ বন্ধ

নড়াইল প্রতিনিধি:

নড়াইলে অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর পর বন্ধ কলেজ খোলা হবে বুধবার (২০ জুলাই)। মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র জিবি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্ত্তী মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪ টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দুঃখের সাথে বলেন, গত ১৮ জুন “ আমার আতœার অপমৃত্যু হয়েছে।

তারপরও আমার নিজ প্রতিষ্ঠান, আমার প্রানের প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে চাই। কলেজের শিক্ষক- কর্মচারী, শিক্ষার্থী, এলাকাবাসি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার দ্বায়িত্ববোধ রয়েছে। আমার দ্বায়িত্বে অবহলো করতে পারিনা। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে আমি এ প্রতিষ্ঠানের সাথে রয়েছি। আমি ১৯৯১ সাল হতে এ কলেজে শ্রম দিয়ে আসছি। কিন্তু নিয়োগ পাই ১৯৯৪ সালের সেপ্টম্বর মাসে। কলেজটি এমপিও ভুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে।

আমার রক্ত ও ঘাম মিশে আছে এ কলেজের সাথে। আজ পর্যন্ত আমি দ্বায়িত্ব পালনে ন্যুনতম কোন অবহেলা করিনি। এ কলেজের শিক্ষার্থীরা আমার প্রাণ। এলাকাবাসি,জিবি ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে আমার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।

আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে ছিনতাইয়ের টাকাসহ গ্রেফতার ৫

কিন্তুু কে বা কারা গত ১৮ জুন ছাত্র রাহুলের দেয়া ধর্মীয় উস্কানির পোষ্টের ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে চরম মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে এলাকা অশান্ত করে তোলে। সাধারণ মানুষদের ক্ষিপ্ত করে তোলে আমার বিরূদ্ধে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতা চালায়। সেই মিথ্যা গুজবের কারণে আমাকে নির্মম ভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। একজন শিক্ষককে নির্মম নির্দয় ভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। ৩টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

হুমকি দেয়া হয় শিক্ষকদের। আমার সাথে যা করা হয়েছে,তার বিচার সৃষ্টিকর্তা একদিন করবেন। ভবিষ্যতে যেন আমার মত এমন করুন অবস্থার শিকার কেউ না হন। শিক্ষকতা একটি মহত পেশা। সেই পেশাকে যারা কলংকিত করতে চায়, তারা দেশ, জাতি ও সমাজের শত্রæ। এসব শত্রæদের চিহিৃত করে সামজিক ভাবে বয়কট করা উচিৎ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোন রাজনীতি করা ঠিক না।” এদিকে দীর্ঘ ১মাস ২ দিন পর কলেজ খুলতে যাচ্ছে এমন সংবাদে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী জানান, গত ১৩ জুলাই বিকেলে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে। সভায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও কলেজ খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার (২০ জুলাই) কলেজ খোলা হবে। পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানিয়েছেন, কলেজ খোলা না খোলার ব্যাপারটা একান্তই কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। প্রয়োজনে তারা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবে। তবে নিরাপত্তার জন্য পুলিশী সহযোগিতা চাইলে পুলিশ প্রশাসন সে সহযোগিতা করবে।

আরও পড়ুন…হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার

প্রসঙ্গত: মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহুল দেব রায় গত ১৭ জুন ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার একটি ছবি দিয়ে তার সমর্থনে লেখে “ প্রণাম নিও বস নুপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম”। পরদিন ১৮ জুন রাহুল দেব রায় কলেজে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। তাৎক্ষণিক ভারপ্রাপ্ত াধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস তাকে পুলিশে দেন।

পুলিশ তাকে নিয়ে যেতে গেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাঁধা দেয়। এরই মধ্যে কে বা কারা গুজব ছড়িয়ে দেয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওই ছাত্রকে সমর্থন দিয়েছেন,তার কোন বিচার করতে চাননি। গুজবে এলাকার সাধারণ মানুষ কলেজে এসে বিক্ষোভ করে। এমনকি কলেজে প্রশাসনের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ। এ ঘটনায় ১৭ জুলাই উচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পৃথক দু’টি তদন্ত সম্পন্ন করেছে। তদন্ত শেষে কলেজের জিবি এবং কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আকতার হোসেনকে কারণ দশার্নোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

একই ভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে কলেজে ১৮ জুনের ঘটনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক আকতার হোসেন’র ভূমিকা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার থানায় মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।

আরও পড়ুন…ডেঙ্গুতে নতুন করে আরও ৫১ জন আক্রান্ত , মৃত্যু ২

দন্ডবিধি ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন শিক্ষার্থী রহমাতুল্লাহর রনি, মোবাইল ফোনের মেকানিক শাওন খান, অটোরিকশার চালক সৈয়দ রিমন আলী, মাদ্রাসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ও শ্রমিক নুরুন্নবী। তাদের বাড়ি নড়াইল সদরের মির্জাপুর এবং কলেজের আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে।

সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহামুদুর বলেন, ‘ঘটনার দিন মনিরুল হ্যান্ডমাইকে উসকানিমূলক ঘোষণা দিয়েছিলেন। রিমন আলী স্থানীয়দের মধ্যে জনরোষ সৃষ্টি করেছিলেন এবং নুরুন্নবী কলেজ মাঠে গিয়ে নিজের গায়ের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে সেখানে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। এ ছাড়া রনি ও শাওন সরাসরি অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে

ইবাংলা/জেএন/১৯জুলাই,২০২২

Contact Us