ষষ্ঠ গ্লোবাল ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স সম্মেলন (জিসিবিইসি) গত সপ্তাহে চীনের হ্যনান প্রদেশের জেংচৌ শহরে শুরু হয়। সম্মেলনের ৩৮ হাজার বর্গমিটারের প্রদর্শনী হলে ২ শতাধিক ক্রস-বর্ডার ই-কমার্সের আমদানি-রপ্তানি পণ্য অনেক দর্শক আকর্ষণ করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্ত:সীমান্ত ই-কমার্স বাণিজ্য ব্যবস্থা যথাক্রমে পূর্ণাঙ্গকরণ, আন্তর্জাতিক লজিস্টিক নেটওয়ার্কের ধারাবাহিক ড্রেজ এবং আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স চ্যানেলের দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি বাজার সত্তা চ্যানেলের মাধ্যমে “বিশ্বব্যাপী কেনা, বিশ্বব্যাপী বিক্রি” বাস্তবায়ন করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনের আন্তঃসীমান্ত বহুমুখী পরীক্ষামূলক অঞ্চলে অনলাইন সামগ্রিক পরিষেবা প্ল্যাটফর্মে রেকর্ড কোম্পানির সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পেশাদারিত্বের সীমা কমায়। ফলে বেশ কিছু ছোট ও ক্ষুদ্র সত্তা নতুন বাণিজ্যের কার্যকারকে পরিণত হয়। সময়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে তারা এক দিকে ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা মডেল বজায় রাখে, অন্য দিকে নতুন রূপকে অভ্যর্থনা জানায়।
আরও পড়ুন…৩০ ভাগ সমন্বয় করে পুনঃনির্ধারণ নৌযানের যাত্রীভাড়া
ইরানের এক তরুণ হু ওয়েন ইয়ু (তাঁর চীনা নাম) পার্সিয়ান ইম্প্রেশন ট্রেডিং (বেইজিং) লিমিটেড কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, কোম্পানির প্রধান ব্যবসা হলো ইরানের গালিচা, ট্যাপেস্ট্রি ও হস্ত-শিল্পজাতসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য চীনে বিক্রি করা।
তিনি বলেন, আগে তারা প্রধানত টিকটক ও উইচ্যাটে’র মতো প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করেছেন। এবার তারা প্রথমবারের মতো হ্যনানে বিশ্ব আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তারা প্রদর্শনীর মাধ্যমে আরও বেশি নতুন ক্লায়েন্টের সঙ্গে পরিচিত হবার প্রত্যাশা করেন।
হ্যনান প্রদেশের চৌখৌ শহরের শেং ইয়ান থাং কসমেটিক অ্যাপ্লায়েন্স লিমিটেড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার লি জেন চিয়ে বলেন, আগে কোম্পানির পণ্যদ্রব্য বাণিজ্য কোম্পানি অথবা সরাসরি রপ্তানির মাধ্যমে বিক্রি করা হতো।
বর্তমানে আলি এক্সপ্রেস, আলি-বাবা ডট কম ও আমাজনসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট বিক্রি চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। কোম্পানি কিছু নতুন ক্লায়েন্ট আবিষ্কার করেছে। এখন কোম্পানির প্রসাধনী ব্রাশের বার্ষিক উৎপাদন পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ সেট এবং রপ্তানি করে আয় হয় ৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
হ্যনান ইয়ুনহাই সিল্ক রোড নেটওয়ার্ক টেকনোলজি লিমিটেড কোম্পানির লাইভে একজন চীনা এবং একজন বিদেশী অ্যাংকর টিকটকের মাধ্যমে বিদেশী দর্শকদের কাছে হ্যনান যাদুঘরের সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল পণ্যের পরিচয় করিয়ে দেন।
কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জাং মিয়াও ব্যাখ্যা করে বলেন, গত বছরের মার্চ মাসে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা প্রধানত হ্যনানের সংস্কৃতির “বিদেশে যাওয়া”র কাজ করে। বর্তমানে তাদের সহস্রাধিক অ্যাংকর আছেন। জানা গেছে, সাধারণত তাদের একবার লাইভের জিএমভি বা মোট পণ্যদ্রব্য মূল্য কয়েকশ’ বা কয়েক হাজার পাউন্ড স্টার্লিং। কিন্তু প্রদর্শনীর দিনে তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
আন্তঃসীমান্ত+লাইভ, আন্তঃসীমান্ত+ওষুধ, আন্তঃসীমান্ত+ ডিজিটাল……ষষ্ঠ জিসিবিইসি’তে আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সে নতুন বাণিজ্যিক কার্যক্রম, নতুন রূপ ও নতুন চ্যানেলের উপস্থিতি আছে।
আন্তঃসীমান্ত ওষুধ প্রদর্শনী অঞ্চল এবারের সম্মেলনের একটি হাইলাইট। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পণ্য-ভোগীরা গ্লোবাল পেই প্ল্যাটফর্মে অর্ডার করে টাকা দেয়ার ২ মিনিটের মধ্যে ওষুধের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সম্পন্ন হয়ে যায়। তারপর এক্সপ্রেস ডেলিভারির মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয়। সবচেয়ে দ্রুত হলে পরবর্তী দিনে পৌঁছা যাবে।
আন্তর্জাতিক লজিস্টিক প্রদর্শনী অঞ্চলে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো লজিস্টিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম, নতুন জ্বালানী প্রযুক্তি ও গাড়ি, বহুমুখী লজিস্টিক পরিষেবা এবং মাল্টিমোডাল পরিবহনের সঙ্গে জড়িত। যা আন্তর্জাতিক লজিস্টিক, আন্তঃসীমান্ত লজিস্টিক, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি, লজিস্টিক রোবটসহ লজিস্টিক ক্ষেত্রের নতুন ধারণা, নতুন পণ্যদ্রব্য, নতুন প্রযুক্তি, নতুন রূপের সঙ্গে সম্পর্কিত, ওয়ান-স্টপ করে গুদাম, পরিবহন ও বিতরণসহ লজিস্টিক সম্পূর্ণ শিল্প চেইন প্রদর্শন করে এবং পুরোপুরিভাবে আন্তর্জাতিক লজিস্টিকের মান নির্ধারণ, স্বাভাবিকীকরণ, বুদ্ধিমান ও ডিজিটাইজিং প্রদর্শিত হয়।
শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সের মাত্রা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। যা শক্তিশালী-ভাবে দেশটির আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যিক বৃদ্ধিকে সমর্থন দেয়।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক জাং শিয়াং ছেন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ই-বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের অর্জিত সাফল্য এবং বিশ্বের জন্য অবদানের উচ্চ মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ই-বাণিজ্য শিল্প দ্রুততার সাথে উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে।
আরও পড়ুন…জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এতিমখানা, মসজিদ, মাদরাসায় চাউল বিতরণ
২০২০ সালে চীনের অনলাইন বাণিজ্যিক পরিমাণ সারা বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ দখল করেছে। চীনের ই-বাণিজ্য শিল্পের সমৃদ্ধ উন্নয়ন বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য বহু সহযোগিতামূলক সুযোগ সরবরাহ করে। প্রায় ৪২ শতাংশ চীনা অনলাইন ক্রেতারা বিদেশ থেকে পণ্যদ্রব্য বা পরিষেবা কিনে ফেলেছেন।
অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য এমন সাফল্য অর্জন করেছে, আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স বাজারের মাত্রা অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণ থেকে। শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত ধারাবাহিকভাবে গভীরতর হয়, বিদেশে যাবার চ্যানেল দিন দিন বহুমুখী হয়, আন্তঃসীমান্ত লজিস্টিক সরবরাহ চেইন ধারাবাহিকভাবে বিস্তৃত হয় এবং শিল্পের নীতিগত বোনাস অব্যাহতভাবে ছাড়ায়, ফলে তুলনামূলকভাবে সু-সম্পূর্ণ আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স নীতিগত কাঠামো ও ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় এবং বিশ্ব ডিজিটাল বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সুপূর্ণাঙ্গকরণের জন্য কল্যাণকর অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
বিশ্বের মহামারী উঠা-নামা এবং ঐতিহ্যবাহী বৈদেশিক বাণিজ্য পতনের প্রেক্ষাপটে আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স লজিস্টিক খরচ হঠাৎ ও তীক্ষ্ণ-ভাবে ওঠা, কাঁচামাল দাম ধারাবাহিক বৃদ্ধি এবং সরবরাহ চেইন বন্ধ সংকটসহ বিভিন্ন ব্যাপারের মধ্য দিয়ে চলে আসে।
বর্তমানে বিশ্ব আন্ত:সীমান্ত ই-কমার্স ভৌগলিক রাজনৈতিক ঝুঁকি, অর্থনৈতিক পতন, শিল্প চেইন রূপান্তর এবং আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স রূপ পরিবর্তনসহ বিভিন্ন সমস্যার চ্যালেঞ্জে আছে। আন্ত:সীমান্ত ই-কমার্স সাফল্যের গোপন ডিজিটাল রূপান্তর ও সুবিন্যস্ত রূপান্তরের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং কুলুঙ্গি বাজারের অংশ দখল করে, সংস্কার এবং উদ্ভাবন চালিয়ে যেতে হবে।সূত্র: সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/১৬ আগস্ট,২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.