গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৭৬তম জাতিসংঘ সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে ‘বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ’ উত্থাপন করেছিলেন। সে বছর থেকে এই প্রস্তাব বার বার আন্তর্জাতিক সমাজের বিভিন্ন মঞ্চে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এতে সমর্থন জানায়। বর্তমানে ৭৭তম জাতিসংঘ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলন চলাকালে উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রতিনিধি আবারও যৌথভাবে টেকসই উন্নয়নের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেছেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ৭৭তম জাতিসংঘ সম্মেলনের ‘বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রুপের’ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এতে সভাপতিত্ব করেছেন। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তি এদিনের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন…দ্বিতীয় দিনের আন্দোলনে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ভিসির আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত
লাওসের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলুমক্সায় কোমাসিথ ভাষণে বলেছেন, বর্তমানে সারা বিশ্ব অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ কঠিন হয়ে পড়েছে। কঠিনতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা জোরদার করা উচিত। তা না হলে, কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নও সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগের কেন্দ্রীয় চিন্তাধারা হল উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া, জনগণকে কেন্দ্রে রাখা, কোনো দেশকে পিছে না রাখা। যা মানবজাতির কেন্দ্রীয় সমস্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বহুপক্ষবাদ রক্ষা করে বাস্তবভিত্তিক বৈশ্বিক অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত, আরো শক্তিশালী, পরিবেশবান্ধব ও সুষ্ঠু বৈশ্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা উচিত। যাতে মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা যায়।
থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রমুদ্বীনই বলেছেন, চীন সরকার সবচেয়ে উপযোগী সময়ে ‘বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ’ উত্থাপন করেছে। থাইল্যান্ড এতে পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং দৃঢ়ভাবে চীনের সঙ্গে বহুপক্ষীয় সহযোগিতাব্যবস্থার মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে, ব্যাপক উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করবে এবং নিজের টেকসই উন্নয়নের পথ খুঁজবে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এবং আঞ্চলিক সংঘর্ষের কারণে বর্তমান বিশ্ব কঠোর সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর উত্থাপিত ‘বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ’-এর উদ্দেশ্য হল বিশ্ব কমিউনিটি স্থাপন করা, যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নকে দ্রুততর করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান আচিম স্টেইনার তাঁর ভাষণে বলেন, জাতিসংঘের সর্বশেষ উন্নয়ন রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, মানবজাতির উন্নয়নের মান গত দুই বছর ধরে হ্রাস পাচ্ছে; যা গত ৩০ বছরের মধ্যে বিরল। বিভিন্ন দেশের উচিত সহযোগিতা ও বোঝাপড়া জোরদার করা, আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। চীনের উত্থাপিত ‘বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ’ বিভিন্ন দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করা এবং যৌথভাবে জাতিসংঘের ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন জোরদার করবে।
আরও পড়ুন…দ্বিতীয় দিনের আন্দোলনে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ভিসির আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত
তিনি বলেন, এই সম্মেলনের আয়োজক দেশ চীন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র কথা মতো, চীন নিজের উন্নয়নের রূপান্তর বাস্তবায়ন করছে, যাতে ‘শূন্য নির্গমন’ বাস্তবায়ন করা যায়। চীন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকে নিজের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। আজকের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে পারবে।
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে আরও বলেন, চীন দারিদ্র্যবিমোচন, জীবিকার উন্নয়ন, মানবজাতি ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থানসহ বিভিন্ন খাতে অর্জিত সাফল্য এবং বিভিন্ন দেশের টেকসই উন্নয়নের নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। সূত্র:সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.