সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি হলো না অতিরিক্ত সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সূতোয় টান পড়লে ঘুড়ি নিয়ন্ত্রনে চলে আসে, আর আমরা মানুষ বেচেঁ থাকি মানুষকে ভালবেসে। প্রতিদানের আশা না করে কারো জন্য কিছু করার নামই বুঝি ভালবাসা? সেই নিখাদ ভালবাসাতেও কিছু প্রত্যাশা প্রাপ্তিতে পরিণত হতে না পেরে আক্ষেপে রূপ লাভ করে।

সেই আক্ষেপের গল্প শুনতে যুগ্মসচিব ড. মো. আবুল কালাম আজাদ’র সঙ্গে ‘ইবাংলার’ নিজস্ব প্রতিবেদক তুলে ধরেছেন আক্ষেপ আর বিস্ময়ের গল্প।

তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী যুগ্মসচিব ড. মো. আবুল কালাম আজাদ পরপর দুইবার যুগ্মসচিব হতে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিঁনি।

ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ আক্ষেপ করে বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পিএস মোঃ সাইফুল্লাহ পান্না (৫৭৩৬) এর পদোন্নতি হলেও আমার পদোন্নতি হয়নি। তাহলে কি আমি বিএনপিএ’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের পিএস এর চেয়েও অধবা ও খারাপ?

আজাদ বলেন, আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ এ সোহরাওয়ার্দী হল সংসদ এর ভিপি এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাকৃবি’র শাখার ভিপি ছিলাম। তিনি আরো বলেন, আমি গাইবান্ধা জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কদমবুচি করার অপরাধে বিএনপি সরকার দুই বছর আমাকে পদাবনতি করে। এমনকি আমার স্ত্রী শিল্প মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় তাকেও চাকরীচ্যুত করা হয়।

অথচ বর্তমানে আমার পছন্দের দল সরকারে থাকলেও আমার পদোন্নতি হয়নি। পাইনি আমার ভালবাসার মূল্যায়ন। একান্ত সাক্ষাতে এভাবেই কথাগুলো বললেন আরইবিতে কর্মরত কর্মকর্তা সদস্য (প্রশাসন) ও যুগ্মসচিব ড. মো. আবুল কালাম আজাদ।

৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান পূর্বক ৯০ জন যুগ্মসচিবকে পদোন্নতি দেয়া হলেও তাতে যুগ্মসচিব ড. মো. আবুল কালাম আজাদ এর নাম না থাকায় তিনি বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ড. মো. আবুল কালাম আজাদ এর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে তার আক্ষেপের বিভিন্ন দিক। তিনি তার পছন্দের দল আওয়ামী লীগকে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কতটা ভালবাসেন সে বিষয়ে আন্তরিকতার সাথে আবেগঘন কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি বলেন, ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশ প্রশাসন সর্বশেষ জেলা প্রশাসকের রিপোর্ট আমার পক্ষে “অতি উত্তম” এবং ACR 99.5% থাকার পরেও পদোন্নতিতে সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমার পদোন্নতি হয়নি।

তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের মে মাসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার একাডেমি সফিপুর পরিদর্শনে গেলে আমি তাকে ফুলেল সংবর্ধনা জানাই এবং পা ছুঁয়ে সালাম করি। আমি সে সময় প্রবেশনার এডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম।

ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি সারা জীবন সৎ থেকেছি এবং সততা সুনামের সাথে চাকরি করেছি। জেলা প্রশাসক ও ০৫ বছর ধর্ম মন্ত্রীর একান্ত সচিব থাকা সত্ত্বেও কোনো দুর্নীতি করিনি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। ইনশাল্লাহ সততা ও সুনাম বজায় রেখেই চাকরি করছি এবং করবো।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৪ সালে আমি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে নিয়োজিত প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। সে সময় তৎকালীন বিরোধী নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঈশ্বরদীতে পথসভা করতে গেলে তার গাড়ী লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো বোমা ও গুলি বর্ষণ করে বিএনপি ও জামাতের সন্ত্রাসীরা। জীবনের ভয়ে সেদিন তার সঙ্গীরা রেলের সিটের নিচে লুকিয়ে ছিল। আমি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সেদিন শেখ হাসিনার পক্ষ অবলম্বন করি এবং তাকে নিরাপদে নাটোর রেল স্টেশন পর্যন্ত পৌছায়া দেই। তার সাথে প্রাক্তন বস্ত্র মন্ত্রী খ ম জাহাঙ্গীর ছিলেন।

আমিও সেখানে তাকে নিরাপদে নেয়ার জন্য সন্ত্রাসীদের রুখতে পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেই এবং তাকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য সক্রিয় থাকি। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলির ঘটনায় আমি বাদি হয়ে মামলা করি। সেই মামলায় বিএনপি জামায়াতের ৮ জন সন্ত্রাসীর ফাঁসি হয় এবং ২৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে।

ড. আজাদ আরও বলেন, ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শেখ হাসিনা পাবনা জেলার কাশিনাথপুর মোড়ে ইউরিয়া সার ক্রাইসিস এর সময় পথসভা করছিলেন। তখন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা নেত্রীকে লক্ষ করে বৃষ্টির মতো গুলি করে ও বোমা ছোড়ে। সে সময় নেত্রীর সাথে কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না, সবাই প্রাণ ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ছিলেন তার ড্রাইভার সোহরাব হোসেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার লিলি চৌধুরী ও আমি। ওই ইউরিয়া সার ক্রাইসিসে বিএনপি-জামাত সরকার ১৪ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করে।

সেই কৃষক হত্যার প্রতিবাদ পথসভায় নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মলয় কুমার রায় ছিলেন; যার পরিচিতি নম্বর ৪১৭৭। তিনি ৮৫ ব্যাচের হিন্দু কর্মকর্তা। তিনি আমাকে বলেন শেখ হাসিনা মরে মরুক আমি যাব না। গেলে আমার চাকরি চলে যাবে। তিনি আমাকে বলেন আজাদ তুমিও যেওনা। আমার ধারণা ছিল হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামীলীগকে ভালোবাসে এবং সমর্থন করে। সেদিনের ঘটনায় আমার সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল। সেখান থেকে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রটেকশন দিয়ে আমার গাড়িতে করে নগরবাড়ি ঘাটে নিরাপদে পৌঁছে দেই।

এরপর ২৩ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১১ টায় ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ড. মো. আবুল কালাম আজাদকে ০১৭১১-৫২০০০০ নম্বরে মোবাইল ফোনে জানান, আমার নেতাকর্মীকে ক্ষেতলাল পাইলট স্কুলে আজিজ মোল্লার গ্রুপ আটকে রেখেছে। তাদেরকে আহত করে একটি স্কুল ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। আজাদ তুমি সেখানে যাও এবং তাদেরকে উদ্ধার করো। তখন আমি বলি, আপনার কথামতো কাজ করলে তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া আমার চাকরি খেয়ে ফেলবে, বিএনপি সরকার ক্ষমতায়।

তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তোমার চাকরী খেয়ে ফেললে আমি তোমার চাকরী দিবো। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার চাকরির মায়া ত্যাগ করে সেখানে যাই, ১৫ রাউন্ড গুলি করি। দু’জন বিএনপি সন্ত্রাসী গুরুতর আহত হয়। কিছুদিন পর তারা মারা যায়। আরো ১৪/১৫ জন আহত হয় এবং সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্ধার করে তাদের বগুড়া পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেই।

এ ঘটনার পরের দিনই আমাকে রাঙ্গামাটির পার্বত্য জেলার নানিয়ার চরে বদলী করা হয় এবং তৎকালীন বিএনপি জামাত জোট সরকার ও খালেদা জিয়া আমার বিরুদ্ধে ১৭টি বিভাগীয় মামলা করে। আমাকে ৭৯ বার বদলী করা হয় এবং দুই বছর পদাবনত করে। শুধু হাসিনা আপা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ভালবাসার জন্য এবং আওয়ামী লীগ করার কারণে এসব শাস্তি পেতে হয়েছে।

এসব ঘটনায় আবেগ তাড়িত হয়ে ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুধু আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে ৭৯ বার বদলী হতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাকে তারা বদলী করেই ক্ষান্ত হয়নি, বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়া আমার বিরুদ্ধে ১৭টি বিভাগীয় মামলা করেছিল। আমি সবসময় সঠিক ছিলাম বলে ১৬টি মামলা থেকে অব্যাহতি পাই এবং আমি সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব হতে ২২ বছর চলে যায়। ২ বার বঞ্চিত হই উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব হতে। ৬ বছর ০৭ মাস সময় নষ্ট হয়। এখানে ০৫ বার পদোন্নতি বঞ্চিত হই।

শেষে এখন আবার আর যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হলোনা চার বছর। অথচ হাসিনা আপা/ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, আমার কাছে এখন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। তাহলে দেশ এখন কে চালায়? আওয়ামী লীগ না সরকার বিরোধীরা।

এবারে যে ৯০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে শুধু ০৩ (তিন) জন সরকার সমর্থিত। বাকী সব বিএনপি ও জামাতের সদস্য, সরকার বিরোধী। এদের মধ্যে ১২ জন ছাত্রদলের ভিপি আছে এবং ০৫ জন ছাত্র শিবিরের ভিপি আছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রীয় শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ তিনি পদোন্নতির তালিকাটি DGFI, NSI, Police ও জেলা প্রশাসকগণ দিয়ে ক্রসচেক করে দেখবেন। আমি সত্য না বল্লে তিনি আমাকে সরকারী চাকুরী থেকে অব্যাহতি দিবেন। এটা আমি হাসিনা আপার কাছে দাবী করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, লিডার অফ দি আর্থ, গণতন্ত্রের মানস কন্যা, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমি চারবার সহযোগিতা করেছি এবং একবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে সবার সামনে পা সালাম করে চাকরীতে পদাবনত হয়েছি।

জেলা প্রশাসক ও ০৫ বছর মাননীয় ধর্ম মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান মহোদয়ের একান্ত সচিব (পিএস) এবং ছাত্রলীগের ভিপি থাকার পরেও আমি পদোন্নতি পাইনি, মনে খুবই কষ্ট হয়। আমার স্ত্রীকে মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার চাকুরীচ্যুত করেন। এত কিছুর পরেও আমার পক্ষে পদোন্নতি দেয়ার জন্য একশত জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিগণের ডিও লেটার থাকার পরেও আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা পদোন্নতি দেয় নাই। আমি দুঃখ পেলেও তিনি দীর্ঘজীবি হোন এই কামনাই করি।

এ সবই হয়েছে আওয়ামী লীগকে ভালবেসে। আমার চাকরি জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সর্বমোট ০৯ বার পদোন্নতি হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ছাত্রলীগের ভিপি হিসেবে এটাই কি আমার পুরস্কার?

সবশেষ ড. মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে করে, যদি আমাকে ডেকে একবার শুনতেন

ইই

Contact Us