প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাবিশ্বে কিন্তু একদিকে খাদ্যাভাব, অপরদিকে প্রচুর খাদ্য অপচয় হয়। এ অপচয় যেন না হয়। বরং যে খাদ্যগুলো অতিরিক্ত থাকে, সেটিকে আবার ব্যবহার করা যায় কীভাবে, সেই বিষয়টা আমাদের চিন্তা করতে হবে। সেই ধরনের ব্যবস্থাও আমাদের নিতে হবে।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর একটি বেসরকারি হোটেলে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা যখন মহামারি আকারে দেখা দেয় তখনই আমি আহ্বান জানিয়েছি যে আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। বিশ্বের অনেক দেশে এখন খাদ্যের অভাব। অনেক দেশ দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকেই আমরা বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে কৃষিঋণ দেওয়া শুরু করি। আমাদের লক্ষ্য ছিল ব্যাংক কৃষকের কাছে পৌঁছে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশ থেকে কৃষকদের ভর্তুকি দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগ থেকেই বিশ্বব্যাংক আমাদের পরামর্শ দিয়েছে যে, ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। আমরা বলেছিলাম, পৃথিবীর সব দেশ দেয়, আমরা কেন দেব না।’
২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেইনি বলে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। কারণ গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দেইনি বলেই আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হলো না। বৃহৎ দুটি দেশ আর প্রতিবেশী দেশ তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। কারণ আমার নিজের দেশের সম্পদ আমি অন্যের কাছে বিক্রি করার আগে আমার কথা ছিল আগে দেশের মানুষ তাদের চাহিদা পূরণ হবে, পঞ্চাশ বছরের মজুদ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘তারপর যেটি অতিরিক্ত থাকবে সেটা আমি বেচতে পারি। তাছাড়া এই দেশের সম্পদ আমি বেচতে পারি না। এ কথা আসলে একটা বিশাল দেশ আমেরিকা আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের পছন্দ হয়নি। কাজেই আমি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কিন্তু দেশ বেচে তো আমি ক্ষমতায় আসব না, এটা হলো বাস্তব।’
দেশের মানুষের প্রথম চাহিদা খাদ্য- এমনটি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের খাদ্য দিতে হবে। এজন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। যদি কেউ ঋণ না দেয়, তাহলে নিজেদের পয়সায় দেব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার ভাষায় বলতে হয়, বাংলাদেশের মাটি আছে, মানুষ আছে, আমরা যেন খাদ্যের অভাবে আর কখনো না ভুগী। উত্তরবঙ্গ আওয়ামী লীগ সরকার এলেই মঙ্গা মুক্ত হয়। মঙ্গা মুক্তই থাকবে। বাংলাদেশে কখনো যেন দুর্ভিক্ষ হতে না পারে।’
কৃষি জমি রক্ষার তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কৃষি জমি যেন কোনো মতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমরা উৎপাদন করব, উন্নয়ন আমরা করব। সে উন্নয়নটা আমাদের কৃষি জমি সংরক্ষণ করে করতে হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ ও খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য চাহিদা ইনশাল্লাহ আমরা পূরণ করে যাব। হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য দিয়েও তাদের চাহিদা আমরা পূরণ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
উৎপাদিত খাদ্যের মান ঠিক রাখার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য শুধু উৎপাদন না মানটা যেন ঠিক থাকে।’
বীজ উৎপাদনে বিভিন্ন গবেষণা করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীজ আমরা উৎপাদন করব, আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকব না।… সরকারি থেকে উৎপাদন করবে, বীজ মান সম্পন্ন এবং যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কৃষিতে সফলতার জন্য বাংলাদেশি কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমরা চাহিদার উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে তৃতীয়, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং ইলিশ মাছ উৎপাদনে প্রথম স্থান অর্জন করেছি।’