প্রাচীনকাল থেকেই ‘সিও কাং’ বা স্বচ্ছল সমাজকে আদর্শ সামাজিক রূপ হিসেবে গ্রহণ করে তার অনুসন্ধান করছে চীনা জাতি। তাহলে সিও কাং এর বিস্তারিত মানে কি? কেন কোটি কোটি চীনা এর স্বপ্ন দেখছেন?
সিও কাং শব্দটি চীনের প্রাচীনতম তথা ২৫০০ বছর আগের কবিতা সংকলন‘সি চিং’ থেকে এসেছে। তার মূল অর্থ হল শান্তি, যা পরে এক ধরনের সমাজের কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পরিণত হয় । তাই সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ জীবন চীনাদের আশাআকাঙ্ক্ষায় প্রতিফলিত হয়।
আরও পড়ুন…নাইক্ষ্যংছড়তিে ৪৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করলেন র্পাবত্য মন্ত্রী :
১৯৭৯ সালের ৬ ডিসেম্বর চীনের তত্কালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী তেং সিয়াও পিং যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ওহিরা মাসাইউশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি প্রথমবারের মতো সচ্ছল পরিবার শব্দ ব্যবহার করে চীনের আধুনিকায়নের পর্যায়ক্রমিক লক্ষ্য বর্ণনা করেন। পরে সচ্ছল সমাজের ধারণাটিকে চীনের দেশ ও সমাজ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
২০১২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসে স্পষ্টভাবে বলা হয় যে চীন সার্বিক সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।সচ্ছল শব্দের সহজে বোধগম্য ব্যাখ্যা করেছেনপ্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে যখন তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছুংছিং শহরের হুয়া সি গ্রাম পরিদর্শন করেন, তখন তিনি বলেছেন, সচ্ছল হতে পারে কি না—তা গ্রামের বাসিন্দাদের উপর নির্ভর করে। তার মানে দারিদ্রবিমোচন কাজ কীভাবে চলে—তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি দরিদ্র এলাকা তার একজন দরিদ্র মানুষকেও বাদ দিতে পারবে না। অবিরাম সংগ্রামের মাধ্যমে চীন দারিদ্রবিমোচনের সার্বকি সাফলতা অর্জন করে। প্রায় ১০ কোটি গ্রামীণ বাসিন্দা দারিদ্রমুক্ত হয়েছে এবং মাথাপিছু জিডিপি ১০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি, বিশ্বের বৃহত্তম মাঝারি আয়ের গ্রুপ সৃষ্ট হয়েছে চীনে।
২০২১ সালের ১ জুলাই চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষপূর্তী সভায় সি চিন পিং বলেছেন, আমি পার্টি ও চীনা মানুষের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি যে পার্টি ও চীনের সকল জাতির মানুষদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা প্রথম শতবর্ষের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছি। অর্থাত্ চীনে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা হয়েছে।
২০০০ বছর আগে সি চিংতে চীনারা প্রথমবারসচ্ছল জীবনের আশা প্রকাশ করেছে আর আজ তা বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। সচ্ছল শব্দটি সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মতো চীনা বৈশিষ্ট্যের সমাজতন্ত্রের বিশেষ শব্দতে পরিণত হয় এবং আন্তর্জাতিক সমাজের যারা চীনকে ঝুতে চায় তাদের এ শব্দগুলোকে বুঝতেহবে।
দেশ পরিচালনার প্রধান কাজ হবে মানুষের সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করা। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসে সকল চীনা মানুষের অভিন্ন সমৃদ্ধি বস্তবায়ন এবং চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুদ্ধার এগিয়ে নিয়ে যাবার সুবিন্যাস করা হয়েছে।
চীনা মানুষ তাদের সচ্ছল সমাজের স্বপ্ন পূরণ করেছে এবং এখন দ্বিতীয় শতবর্ষের লক্ষ্য অর্থাত্ এ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ১০০ বছরে চীনকে সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, সভ্য, ও সুন্দর একটি সমাজতন্ত্রিক শক্তিশালী দেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাচ্ছে চীনারা। সূত্র:শিশির , সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/৮ ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.