চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে ২৪ শতাংশ পরিবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। স্বাস্থ্য খাতে পরিকল্পিত অর্থায়ন না করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। পারিবারিক আয়ের ১০ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হলে তাকে বলা হয় বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয়। এই ব্যয় বেশি হলে অনেক মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েন, অনেকে নিঃস্ব হয়ে যান। চিকিৎসা ব্যয় হলে মানুষ সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। অথচ ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের মতো দেশে কিডনি রোগীসহ অনেক জটিল রোগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা চালু রয়েছে।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিবস-২০২২ উপলক্ষে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন…সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে নির্দেশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে
বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য বিমা চালু ও সরকারি সহায়তা সঠিকভাবে পেলে বাংলাদেশের মানুষকেও বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। সরকারকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা জনগণকে সুস্থ রাখলে দেশের জিডিপি বাড়বে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাউথ ইস্ট ইউনির্ভাসিটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এমেরিটাস ড. এম শমসের আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব হেলথ সায়েন্সের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহাবুব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ।
অধ্যাপক এমেরিটাস ড. এম শমসের আলী বলেন, অসংক্রমক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ আধুনিক জীবনধারা। তাই জীবন ধারা পরিবর্তনের দিকে জোর দিতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। তাই সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে অধিক সংখ্যক দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মী তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন…নারীরা কি নবজাতকের কানে আজান দিতে পারবে?
অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহাবুব বলেন, সব মানুষের চিকিৎসা পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। সাবর্জনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার যেন দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় এবং অধিক ব্যবহৃত ওষুধগুলোর নিদির্ষ্ট ও স্বল্পমূল্য নির্ধারণ করে দেয়, যেন সাধারণ মানুষ সেসব ওষুধ সুলভে কিনে সেবন করতে পারেন।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, কিডনি সংযোজনের খরচ কমিয়ে রোগীদের সাধ্যের মধ্যে করতে হবে। জনগনকে সুস্থ রাখলে দেশের জিডিপি বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং চিকিৎসাসেবা উন্নয়নে মাধ্যমে রোগীদের বিদেশ যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। দেশের অর্থ পাচার হওয়া রোধ করতে হবে।
মামুন রশিদ বলেন, প্রতিবছর বাজেট প্রনয়নের আগে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত যারা আছেন এমনকি অর্থনীতিবিদরাও দাবি তুলেন যেন বাজেটের সাত থেকে আট শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় করা হয়। তবে স্বাস্থ্যখাতে তিন থেকে চার শতাংশের বেশি ব্যয় করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয় এবং এদের ৭৫ শতাংশই মৃত্যুবরণ করে থাকে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের চিকিৎসার অভাবে। এছাড়া হঠাৎ কিডনি বিকল হয়েও প্রতিবছর আরও ২০ হাজার রোগী মৃত্যুবরন করে। এই রোগীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জেলা পর্যায়ে ডায়ালাইসিস সেবা চালুসহ এবং প্রতিটি মেডিকেল কলেজে কিডনি সংযোজনের ব্যবস্থা করা দরকার।
তিনি বলেন, আমরা কিডনি রোগীদের কার্ড চালু করতে চাই্ যার মাধ্যমে তারা যেন বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও চিকিৎসা পেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা দরকার।
আরও পড়ুন…‘শাহরুখ-দীপিকা’র ‘বেশরম রং’ শুভ মুক্তি
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন প্রাইসওয়াটার হাউস কুপার্স, বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মেরি স্টোপস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মামুন রশিদ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রুহুল আমিন রুবেল, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মিসেস টিনি ফেরদৌস রশিদ প্রমুখ।
ইবাংলা/জেএন/১২ ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.