মাটি বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচবে। পরিবেশ বাঁচলে রক্ষা পাবে প্রাণী ও উদ্ভিদজগৎ। জীবিকা নির্বাহের জন্য সমস্ত জীব মাটির উপর নির্ভরশীল। মাটিতে হাজার হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মায়। উদ্ভিদ মাটি থেকে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি সংগ্রহ করে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী উদ্ভিদ থেকে তাদের পুষ্টি গ্রহণ করে। উদ্ভিদ থেকে মানুষ খনিজ, ভিটামিন এবং প্রোটিন গ্রহণ করে, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। অর্থাৎ খাদ্যের জন্য মানুষ মাটির উপর নির্ভরশীল।
পৃথিবীর খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য মাটি অত্যাবশ্যক। পৃথিবীর প্রায় ৯৫ ভাগ খাদ্য জোগান দেয় মাটি। সুস্থ মাটি পৃথিবীর ক্ষুধা দূর করতে এবং আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর একটি গ্রহ উপহার দিতে সক্ষম। মাটির পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা একটি প্রধান বৈশ্বিক সমস্যা।
আরও পড়ুন…অবশেষে ‘কারাগার টুর মুক্তি
যা পুষ্টির অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার, অপব্যবহার কিংবা অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ঘটে থাকে। সারের অতিরিক্ত ব্যবহার বা অপব্যবহার বাস্তুতন্ত্রের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধনসহ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ও জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো একুশ শতকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মাটির স্বাস্থ্য, টেকসই ব্যবস্থাপনা ও অবক্ষয় সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ২০১৪ সালের ০৫ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বরগুনায় পালিত হয়েছে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস।
‘মাটি : খাদ্যের সূচনা যেখানে’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র কারিগরি সহযোগিতায় স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা সংগ্রাম এর সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)’র আয়োজনে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে জেলার তালতলী উপজেলার লাউপাড়ায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সচেতনতামূলক আলোচনা করেন, এসইপি’র পরিবেশ কর্মকর্তা মোঃ আরাফাত ইসলাম, রিপোর্টিং অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার সজল মিত্র। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগ্রাম’র লাউপাড়া ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইব্রাহীম সবুজ, প্রধান কর্যালয়ের মিডিয়া অফিসার মো: সানাউল্লাহ রিয়াদ সহ এসইপি পরিবেশ ক্লাব’র সদস্য ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
আলোচকরা সভায় মাটির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন প্রকৃতপক্ষে স্থলজ প্রাণীর জন্য মাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে দিন দিন মানুষ বাড়ছে এবং শিল্পায়ন, নগরায়ন, বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরিসহ নানা কারণে চাষের জমি কমছে। এ দুই সমস্যার সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। অন্যদিকে মাটির উর্বরতা শক্তিও হ্রাস পাচ্ছে। এসব বিবেচনায় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনাসহ শস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সেজন্য মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হতে হবে সকলকে।
আরও পড়ুন…দুর্যোগসহ দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে
স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহের জন্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। ক্রমবর্ধমান ভূমি ক্ষয়, মৃত্তিকা উর্বরতা হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কৃষি উৎপাদনের এই প্রয়োজনীয় বৃদ্ধি সহজসাধ্য নয়। তাই সকলকে মাটি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। হতে হবে সচেতন ও সচেস্ট। তাহলেই রক্ষা পাবে মাটি, ফলবে গুণগতমানের ফসল। তবেই স্বাস্থ্য হবে সঠিক খাদ্যে সমৃদ্ধিশালী।
ইবাংলা/জেএন/২২ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.