রাজবাড়ীতে হাসপাতালে চিকিৎসকের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয়েছে; এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কর্তব্যরত এক চিকিৎসকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই তরুণকেিএবং পরে আরেজন মোট তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা আরেক জনকে আটক করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে গোয়ালন্দ থানা পুলিশ।
দুর্বৃত্তরা হাসপাতালটির উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়েছিল। আজ দুপুরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রোববার রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের কক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি।
এ সময় দুই তরুণ তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেন। কারণ জানতে চাইলে তাঁকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার কথা বলেই মাথায় পিস্তল ঠেকায় ওই দুর্বৃত্তরা। তিনি ধাক্কা দিলে পিস্তল দিয়ে একজন তাঁর মাথায় আঘাত করেন। এ সময় তিনি কক্ষ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আরেক তরুণ ধারালো চাকু বের করে তাঁর মুঠোফোন ও ছয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।
এরপর তাঁরা হাসপাতাল ত্যাগ করে সীমানা প্রাচীরের দক্ষিণ পাশের পকেট গেট দিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় হাসপাতালের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশের একটি দল টহল দিচ্ছিল। খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে আসে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আজ দুই তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন গোয়ালন্দ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড হাউলিকেউটিল গ্রামের মো. রনি (২৭) ও পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কুমড়াকান্দি গ্রামের ইমরান হোসেন (২৮)। এর মধ্যে রনির কাছ থেকে চিকিৎসকের মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন বলেন, দ্রুততার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে কাজ করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত আরেকজনকে আটকের চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনার পর আজ সোমবার সকাল ৯টার পর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে পারেননি। দৌলতদিয়া থেকে আসা রাকিবুল ইসলাম নামের এক তরুণ বলেন, ‘সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো চিকিৎসক পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই।’
এর আগেও হাসপাতালটিতে একাধিকবার চুরি ও চিকিৎসকদের কক্ষের তালা ভাঙার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, একের পর এক দুর্ঘটনা এবং রোববার রাতে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ায় চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সকালে ওসির উপস্থিতিতে সিসি ক্যামেরার মাদার বোর্ডের পাওয়ার প্লাগ খোলা পাওয়া যায়। চিকিৎসক জীবনে এমনটি আগে দেখিনি। সকালে চিকিৎসকদের সঙ্গে করণীয় বিষয়ে বৈঠকে বসায় সাময়িক সময়ের জন্য চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।’
ইবাংলা/টিএইচকে
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.