‘চলচ্চিত্র হলো প্রবাহ নদীর মতো। যার মাধ্যমে সমাজের দুঃখ-দুর্দশা, প্রেম-বিরহ, পারিবারিক বন্ধন, যুদ্ধ-শান্তি, বিপ্লব-প্রতিবিপ্লব, নায়ক-খলনায়ক তথা সংস্কৃতিকে সেলিলয়ে অবদ্ধ করে পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। চলচ্চিত্র শুধু চিত্তবিনোদনের মাত্রা নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইতিহাস ঐতিহ্যের দলিল হয়ে ওঠে।’ বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ।
আরও পড়ুন…চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান : তথ্যমন্ত্রী
আজ (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও এ উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মো. শাহরিয়ার আলম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সচেতন ও মানুষকে শিক্ষিত করার অন্যতম মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই চলচ্চিত্র নির্মিত হয় এবং মানুষ তা উপভোগ করে। প্রযুক্তির কারণে এ শিল্পের অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। অসখ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। সাদা-কালো সিনেমা এখন অতীত। ঘটেছে রঙিন-অ্যানিমেশনের বিপ্লব।’
উৎসবের উদ্বোধনী উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল, কলকাতার খ্যাতিমান অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খান, অভিনেত্রী রোজিনাসহ উৎসবে আগত বিদেশি শিল্পী-কলাকুশলীরা।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিনির্মাণের পেছনে রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস। পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো সুযোগ ছিলো না। কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে তার ‘নেকেটিভ’ নিয়ে যাওয়া লাগতো পশ্চিম পাকিস্তানের লাহরে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে সেই সিনেমা দেশে আনতে গেলে লাগতো কাস্টমসের ক্লিয়ারেন্স। এমন প্রেক্ষাপটে বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নজরে আসে। ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের প্রথম অধিবেশন।
২৭ মার্চ ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু দ্যা ইস্ট পাকিস্তান ফিল্ম কর্পোরেশন বিল সংসদে উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে এই বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এবং কার্যকর হয়। এভাবেই মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিহাস রচিত হয়। আমার বিশ্বাস, দর্শক চলচ্চিত্র উপভোগের মাধ্যমে নিজের ও সমাজের সৃজনশীলতা বিকাশ ঘটাবে।’
আজ থেকে হওয়া এ উৎসব চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৮ দিনে ১০টি বিভাগে বিশ্বের ৭১টি দেশের ২৫২টি চলচ্চিত্র এ উৎসবে প্রদর্শন করা হবে। ৮ দিনব্যাপী উৎসবের ভেন্যু হিসেবে এবারও থাকছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মূল ও সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও স্টার সিনেপ্লেক্স। উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ফাখরুল আরেফীন খান পরিচালিত ‘জেকে ১৯৭১’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে প্রদর্শন করা হয় সিনেমাটি।
এছাড়া রবিবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল পাঁচটায় চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার হবে আশিক মোস্তফা পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘থার্টিফাইভ’। গত ডিসেম্বরে ইরানের সিনেমা-ভেরিটে চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশ প্যানারোমায় বিভিন্ন দৈর্ঘের ৮২টি সিনেমা প্রদর্শিত হবে। হাওয়া, বিউটি সার্কাস, দামাল, পাপপুণ্য, সাঁতাও, দেশান্তরসহ বেশ কিছু আলোচিত সিনেমা রয়েছে তালিকায়।
আরও পড়ুন…যেসব অভ্যাসে বাড়িয়ে দেয় মাইগ্রেনের ব্যথা
‘ওয়াইড অ্যাঙ্গেল’ বিভাগে ১১টি সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘ওরা ৭ জন’ ও প্রামাণ্যচিত্র ‘দুর্বার গতি পদ্মা’। এ ছাড়াও ‘অপরাজিত’, ‘অভিযান’, ‘ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ’, ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘ঝরা পালক’, সাই পল্লবি অভিনীত ‘গার্গি’ ও ‘মহানন্দা’র মতো সিনেমা বিভিন্ন বিভাগে প্রদর্শিত হবে।
ইবাংলা/জেএন/১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.