হকারদের মাধ্যমে সমাজে ছড়ানো ‘হযরত ফাতেমা (রা)-এর জীবনী’ নামের একটি পুস্তকে ফাতেমা রা. কেন্দ্রিক একটি কিসসা (ঘটনা) লেখা হয়েছে- ‘প্রখ্যাত মহিলা সাহাবী উম্মে আইমান রা. বর্ণনা করেন।
কোনো এক সময় আমি দ্বিপ্রহরে বিশেষ প্রয়োজনে নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা.-এর গৃহে গমন করলাম। আমি দেখতে পেলাম, তার গৃহের দরজা বন্ধ হলেও গৃহাভ্যন্তর হতে জাঁতা ঘূর্ণনের শব্দ আসিতেছিল।
এহেন শব্দ পাওয়ার পর আমি গৃহের ছিদ্রপথ হতে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা. অঘোরে নিদ্রা যাইতেছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল তিনি নিদ্রায় গেলেও তার পাশে জাঁতা আপনা হতেই ঘুরতেছে। নবীকন্যা হযরত ফাতেমার আদরের দুলাল অন্যের সাহায্য ছাড়াই দুলতেছে এবং নবীদুলালী হযরত ফাতেমা রা.-এর পাশে জনৈক রমণী তাসবীহ পাঠে রত আছেন।
উম্মে আইমান বলেন, এহেন কাহিনীটি আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বললাম। তিনি বললেন, হে উম্মে আইমান! দ্বিপ্রহরের তীব্র দহনে হয়তোবা অবসন্ন ফাতেমা জাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে নিদ্রা গেলেও তার আটা তৈরির খুবই প্রয়োজন ছিল।
এদিকে নিজের তাসবীহ পাঠও বাকি ছিল এবং গরমে শিশু হুসাইনের নিদ্রা টুটিবারও আশংকা ছিল। যার কারণেই রহমানুর রাহীম আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় দাসী ফাতেমার ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে তিনজন ফিরিশতা পাঠিয়ে তাদের মাধ্যমে ফাতেমার সংসারের সকল কাজ সমাধা করে রেখেছেন।’
এ কিসসাটি হাদীস-সীরাতের নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায় না। আসলে এটি শিয়াদের বানানো একটি কিসসা। শিয়ারা আহলে বাইতের নামে বহু কিসসা জাল করেছে। এটি তেমনই একটি কিসসা। তাদের থেকেই পাক-ভারত উপমহাদেশে এ কিসসাসহ এজাতীয় বহু কিসসা প্রসিদ্ধ হয়েছে।
প্রসিদ্ধ শিয়া পণ্ডিত মুহাম্মাদ বাকের আলমাজলিসী (১০৩৭-১১১০ হি.)কৃত বিহারুল আনওয়ার (খণ্ড ৩৭, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮)-এ ঘটনাটি কোনো প্রকার সূত্র ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখানে কিসসাটিতে রয়েছে, ‘…কোনো মানুষ ছাড়া জাঁতাটি একাই ঘুরছিল এবং হুসাইন রা.-এর দোলনাও কোনো মানুষ দোল দেওয়া ছাড়াই দুলছিল এবং ফাতেমা রা.-এর হাতের কাছে একটি হাত দেখা যাচ্ছিল, যা তাসবীহ পড়ছিল।…
(সেখানে শেষে রয়েছে,) উম্মে আইমান রা. নবীজীকে জিজ্ঞেস করেন, দয়া করে আমাকে বলুন, কে জাঁতা ঘুরাচ্ছিল, কে দোল দিচ্ছিল এবং কে তাসবীহ পাঠ করছিল? তখন নবীজী বললেন, জাঁতা ঘুরাচ্ছিল জিবরীল আ. আর হুসাইনকে দোল দিচ্ছিল মিকাঈল আ. এবং তাসবীহ পাঠ করছিল ইসরাফীল আ.।
কিসসাটি বিহারুল আনওয়ারে কোনো প্রকার সূত্র ছাড়া-
ورأيت في بعض مؤلفات أصحابنا
‘আমাদের (শিয়াদের) কোনো কোনো কিতাবে দেখেছি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিহারুল আনওয়ার ছাড়াও শিয়া পণ্ডিত সায়্যেদ হাশেম আলবাহরানী (মৃত্যু : ১১০৭/১১০৯ হি.)কৃত ‘মাদীনাতুল মাআজিয’ (খ. ৪, পৃ. ৪৬-৪৮)-এও কিসসাটি রয়েছে।
শিয়াদের মাঝে ফাতেমা রা.-এর ঘরে একা একা জাঁতা ঘূর্ণনের এ কিসসাটি আরো বিভিন্নভাবে প্রসিদ্ধ আছে। কিন্তু কোনোটিরই নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ নেই। অর্থাৎ তা একটি বানোয়াট কিসসা। সূত্র : উচ্চতর ফতোয়া ও হাদিস গবেষণা বিভাগ মারকাযুদ্দাওয়াহ আল ইসলামিয়া
ইবাংলা/ জেএন/ ৫ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.