ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা

ডেক্স রির্পোট

সংগ্রহটা আহামরি কিছু ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিংও অসাধারণ কিছু ছিল না। সব মিলিয়ে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয়টি তুলে নিতে কোনো অসুবিধাই হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রথমে ব্যাটিং করে ক্যারিবীয়দের গড়া ১৪৩ রানের সংগ্রহকে প্রোটিয়ারা ছাপিয়ে গেছে ৮ উইকেটে ১০ বল হাতে রেখেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। ৪ রানের মাথাতেই ফিরে যান অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, রান আউট হয়ে। এমনিতেই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা সংক্রান্ত কার্যক্রমের সঙ্গে একমত না হয়ে এ ম্যাচ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। তাই বাভুমার দ্রুত ফিরে যাওয়া চিন্তার রেখা তৈরি করেছিল প্রোটিয়াদের কপালে।

তবে রিজা হেনড্রিকস আর রাসি ফন ডার ডুসেনের ব্যাটে সেটি দ্রুতই মিলিয়ে যায়। হেনড্রিকস আর ডুসেন দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৫০ বলে ৫৭ রানের জুটি। দলীয় ৬১ রানে ফেরেন রিজা হেনড্রিকস। আকিল হোসেনের বলে হেটমায়ারের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ক্যারিবীয়দের কারিশমা এ পর্যন্তই।

রবি রামপল, আকিল হোসেন, আন্দ্রে রাসেল, হেইডেন ওয়ালশ, ডোয়াইন ব্রাভোদের বোলিংকে সাধারণ পর্যায়ে নামিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের করে নেন ডুসেন আর এইডেন মার্করাম। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৪ বলে ৮৪ রান করে ম্যাচটা জিতিয়েই নিয়ে ফেরেন তারা। হেনড্রিকস ৩০ বলে ৩৯ করেছিলেন। ডুসেনের ইনিংসটি ( ৫১ বলে ৪৩) অবশ্য ঠিক টি–টোয়েন্টি গোছের ছিল না। তবে তিনি দুটি জুটিকে সমন্বয় করেছেন দারুণভাবে। মার্করাম অপরাজিত ছিলেন ২৬ বলে ৫১ রান করে।

আগের ম্যাচে এ মাঠেই যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দুই বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুবাইতেই আরেকটি ম্যাচে তারা ‘৫৫’-তে গুটিয়ে যাওয়ার অভিশাপটা অন্তত কাটিয়েছে। কিন্তু শুরুতে এভিন লুইসের তাণ্ডবে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহটা যে জায়গায় পৌঁছাবে অনুমান করা হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত তারা সেখানে যেতে পারেনি। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪৩ রানের বেশি করতে পারেনি।

টসে হেরেই ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম বলেই রান আউট হয়ে যেতে পারতেন সিমন্স। কিন্তু ভাগ্যগুণে বেঁচে যান। এইডেন মার্করামের প্রথম ওভারে আসে ৪, কাগিসো রাবাদার দ্বিতীয় ওভারে ২। মার্করাম তৃতীয় ওভারটা করেন মেডেন। চতুর্থ ওভারেই আসে ১২ রান। এর মধ্যে সিমন্স চতুর্থ বলে মারেন বাউন্ডারি, পঞ্চম বলে ছক্কা। এ ওভারে সাহস সঞ্চয় করেই মার্করামের পরের ওভারটি থেকে লুইস নেন ১৮। ৫ ওভার শেষ ৩৬ রান তুলে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ইঙ্গিত দিচ্ছিল বড় সংগ্রহেরই। পাওয়ার প্লে’তে বিনা উইকেটে ৪৩ রান আসার পর কিছুক্ষণের বিরতি। সপ্তম ওভারে ৩, অষ্টম ওভারে ১ রান আসার পর নবম ও দশম ওভারে ৯ রান করে আস ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১১তম ওভারেও ৯ রান আসে। তবে এ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রুটি। লুইস ৩৫ বলে ৫৬ রান করে বাঁ হাতি স্পিনার কেশব মহারাজের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন রাবাদাকে। লুইস যখন ফেরেন তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৭৩। ১১ ওভারে এক উইকেটে ৭৩ থেকে ২০ ওভারে ১৪৩— ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউই বলার মতো কিছু করতে পারেননি। নিকোলাস পুরান, ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, শিমরন হেটমায়ার—ব্যর্থ সবাই।

নিকোলাস পুরান ৭ বলে ১২ আর ক্রিস গেইল ১২ বলে ১২ করে ফেরেন। পুরানকে মিলারের ক্যাচে ফেরান মহারাজ, গেইল ডেয়াইন প্রিটোরিয়াসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ক্লাসেনকে। তবে কাইরন পোলার্ড ২০ বলে ২৬ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহটাকে কিছুটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যান।

তবে তাঁকে কেউই ঠিকমতো সঙ্গ দিতে পারেনি আন্দ্রে রাসেল চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পোলার্ডও শেষ অবধি টিকতে পারেননি। প্রিটোরিয়াসের বলে ডুসেনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে। আন্দ্রে রাসেল চেষ্টা করেছিলেন। তবে ৪ বলে ৫ রানে করে নর্কিয়ার বলে বোল্ড হন। শিমরন হেটমায়ার রান আউট হন কোনো রান না করেই। গোটা ইনিংসে পঞ্চাশের বেশি ডট বলই আসলে বড় সংগ্রহের দিকে যেতে দেয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শেষ পাঁচ ওভারে ক্যারিবীয়রা ৪৮ রান তুলতেই হারায় ৫ উইকেট।

দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের মধ্যে কাগিসো রাবাদা ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। কেশব মহারাজ ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। তবে নর্কিয়াই ছিলেন দলের সেরা বোলার। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। তবে উইকেটের দিক দিয়ে সেরা প্রিটোরিয়াস—তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট।

টি/আর

Contact Us