সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছিল টাইগাররা। এরপর দেশে একপ্রকার অপ্রতিরোধ্যই হয়ে উঠেছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে ৭ বছর পর সেই ইংলিশদের বিপক্ষেই সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। জস বাটলারের দলের সামনে সুযোগ ছিল স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দেওয়ার। কিন্তু এক সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়িয়ে ৫০ রানে জিতল বাংলাদেশ।
সোমবার (৬ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৪৮.৫ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় তামিম ইকবালের দল। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রানেই গুঁটিয়ে যায় সফকারীরা।
বাংলাদেশের ২৪৬ রানের সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে ইংলিশদের ওপেনিং জুটিই আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। নবম ওভারেই দলের রান পঞ্চাশ ছাড়িয়ে নিয়ে যান ফিল সল্ট ও জেসন রয় জুটি। তবে এরপর দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরেছে টাইগাররা। দলীয় ৫৪ রানের মাথায় সাকিবের ঘূর্ণিতে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সল্ট। বিদায়ের আগে ২৫ বলে ৩৫ রান করেন তিনি।
এরপরের ওভারে এবাদত হোসেন হানেন আঘাত। মিডঅনে মাহমুদউল্লাহর হাতেই ক্যাচ দেন মালান (০)। এরপর সাকিবের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড সেট ব্যাটার জেসন রয় (৩৩ বলে ১৯)। ৫৪ থেকে ৫৫, এক রানের মধ্যে ইংল্যান্ডের তিন উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।
কিন্তু প্রমোশন পেয়ে ওপরে ওঠা স্যাম কারান আর জেমস ভিন্স ফের প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। চতুর্থ উইকেটে তাদের ৪৯ রানের জুটিটি অবশেষে ভাঙলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরাজকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅফ বাউন্ডারিতে লিটন দাসের সহজ ক্যাচ হয়েছেন কারান (২৩)।
এরপর সেট ব্যাটার জেমস ভিন্সকে (৩৮) নিজের তৃতীয় শিকার বানান সাকিব। ক্রিজে থিতু হওয়ার আগেই এবাদত হোসেন বোল্ড করে দেন মঈন আলিকে (২)।
জস বাটলারকে নিয়ে ভয় ছিল। ইংলিশ অধিনায়ককে (২৬) এলবিডব্লিউ করে সেই ভয় দূর করেছেন তাইজুল ইসলাম। ১৫৮ রানে ৭ উইকেট হারানো ইংলিশরা এরপর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি।
সাকিব আল হাসান ৩৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার তাইজুল ইসলাম আর এবাদত হোসেনের।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে স্যাম কারানের বলে উইকেটের পিছনে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার লিটন দাস। টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
এরপর তৃতীয় ওভারে সাজঘরে ফেরেন টাইগার কাপ্তান তামিমও। কারানের ওভারের শেষ বলে প্যাডের ওপর থেকে ফ্লিক করতে গিয়ে লিডিং-এজড হয়ে পয়েন্টে জেমস ভিন্সের সহজ ক্যাচে আউট হন ড্যাশিং এই ওপেনার। বিদায়ের আগে ৬ বলে ১১ রান করেন দেশ সেরা এই ওপেনার।
এলোমেলো ব্যাটিংয়ে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়া বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতের গুরুদায়িত্ব নেন নাজমুল শান্ত-মুশফিক। ইংলিশ বোলারদের চাপ সামলে নাজমুল-মুশফিক জুটিটা বেশ জমেও উঠেছিল। তাদের ৯৮ রানের জুটি গড়ে দলের সংগ্রহ এক শ’ পারও করেন।
তবে দলীয় ১১৫ রানের মাথায় শান্ত রান আউটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নিলে সে জুটিও ভেঙে যায়। চলতি সিরিজে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকানো শান্ত ৭১ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৫৩ রান করেন। নাজমুলের ফিরে যাওয়ার দুই বল পর ক্যারিয়ারের ৪৩তম ফিফটির দেখা পান অভিজ্ঞ মুশফিক।
কিন্তু সাকিবের সঙ্গে জুটি ৩৮ রানের বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি মুশফিক। ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদের গুগলিতে মুশি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। বিদায়ের আগে ৯৩ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৭০ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। এরপর রশিদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও (৮)।
রিয়াদের বিদায়ের পর আফিফকে সঙ্গে দিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দুই শ’ ছাড়িয়ে নিয়ে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। দলীয় ২১২ রানের মাথায় তাদের ৪৯ রানের জুটি ভাঙে আফিফের ১৫ রান করে বিদায়ে। কিন্তু অপর প্রান্তে নিজের ক্যারিয়ারের ৫২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন টাইগার পোস্টার বয়।
মেহেদি মিরাজ ৫ ও তাইজুল ইসলাম ২ রান করে দ্রুত আউট হয়ে গেলেও সাবলীলভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন সাকিব। তবে শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার প্রেক্ষিতে ইনিংস শেষ হওয়ার আগের ওভারে ৭১ বলে ৭৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন টাইগার অলরাউন্ডার।
সাকিবের বিদায়ের পরের বলেই মোস্তাফিজুর রহমান লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নিলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ৪৮ ওভার ৫ বলে ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে পেসার জোফরা আর্চার একাই ৩ উইকেট শিকার করেন। আদিল রশিদ ও স্যাম কারান নেন ২ টি করে উইকেট। এ ছাড়া ক্রিস ওকস আর অভিষিক্ত রেহান আহমেদ লাভ করেন ১টি করে উইকেট।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.