সরকার এরই মধ্যে চলতি বছরেই ৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। প্রতিবার ৫ শতাংশ করে মোট ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী ভর্তুকির বোঝা কমাতে চায় সরকার। এর ফলে, আগামী জুনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম আবারও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারপরও বিদ্যুতের ভর্তুকি কমাতে যথেষ্ট হয়নি এই মূল্য বৃদ্ধি। সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুতের ভর্তুকি ৬ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন…বিএনপি নির্বাচনে না আসা রাজনৈতিক কৌশল, ইসির ব্যর্থতা নয়
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) আইএমএফ স্টাফ মিশনকে জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য বাজেট ভর্তুকি জিডিপির শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে রাখার লক্ষ্যে এই অর্থবছরেই বিদ্যুতের দাম আবারও বৃদ্ধির সুপারিশ করা হবে।
৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির অধীনে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করতে ৮ সদস্যের আইএমএফ স্টাফ মিশন ঢাকায় এসেছেন এবং তারা থাকবেন ২ মে পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এই মিশন পৃথক বৈঠক করেছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় আইএমএফের এশিয়া-প্যাসিফিকের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেছেন, ‘সব ভর্তুকি ভালো নয়, সব ভর্তুকি দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য হয় না। আপনি যদি বাংলাদেশের দিকে তাকান, গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য প্রচুর ভর্তুকি দেওয়া হয়। কারা গাড়ি চালায়? কারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করে? দরিদ্ররা এগুলোর ব্যবহার করে না, করে ধনীরা। একটি আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশে তারা যে ভর্তুকি পাচ্ছেন, তা প্রাপ্য নয়।’
সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং অবকাঠামো ব্যয়ে কতটা খরচ করতে সক্ষম তার ওপর সামগ্রিক ভর্তুকির বিষয়টি নির্ভর করে। পরবর্তীকালে আইএমএফ সামগ্রিক ভর্তুকি বা সামগ্রিক কর ছাড় থেকে বের হয়ে আসতে এবং সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য ভর্তুকি প্রদানের ওপর জোর দেয়।
আরও পড়ুন…একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ব্যয়ের জন্য রেকর্ড ৮১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে আরও ২১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা ছিল। কিন্তু জীবনযাত্রার সংকটে জর্জরিত সাধারণ মানুষের জন্য ৬ মাসের মধ্যে চতুর্থবারের মতো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ গড়ে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে বেশি। মার্চে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে, যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আইএমএফের স্টাফ মিশনকে জানিয়েছেন, নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভের (এনআইআর) জন্য জুনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন, যা ঋণের পরবর্তী ধাপের অর্থ পাওয়ার জন্য ৩টি বাধ্যতামূলক শর্তের একটি। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, ৩০ জুন সর্বনিম্ন এনআইআর হতে হবে সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, ৩০ মার্চ এনআইআর ছিল ২২ বিলিয়ন ডলারেরও কম। যেখানে মার্চের জন্য আইএমএফের শর্ত ছিল এনআইআর সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার হতে হবে।
আরও পড়ুন…ডেপুটি ম্যানেজার’ পদে জনবল নিয়োগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আইএমএফ স্টাফ মিশনকে জানিয়েছেন, তারা আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী জুনের মধ্যে সব অফিসিয়াল বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন এবং সুদের হার করিডোরের জন্য একটি বাজার নির্ধারিত বিনিময় হার চালু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি একক বিনিময় হার চালু করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি।’
জুলাইয়ে যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে, সেখানে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রতিবেদনের মতো অনেক সুপারিশ প্রতিফলিত হবে বলেও জানান তিনি।
আগামী জুনে নেট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে মেজবাউল বলেন, ‘এখনো ৩ মাস বাকি। কাজেই এখনই এটা বলা সম্ভব নয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকবে বলে আশা করছি।’
ইবাংলা/টিএইচকে
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.