সাগরিকায় আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ। সেই আক্ষেপ ভুলে সিলেটে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-২০তে সফরকারীদের নাস্তানাবুদ করে জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামে আফগানিস্তান। এ ম্যাচে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫৪ রান সংগ্রহ করে সফরকারী দল। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সাকিব আল হাসানের দল।
এদিন টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আরও পড়ুন>> নবীর অর্ধশতকে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ১৫৪
আফগানিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন হযরতউল্লাহ জাজাই ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ধীর গতির শুরু করলেও দ্বিতীয় ওভারেই টাইগার বোলারদের ওপর চড়াও হয় এ জুটি। তবে নাসুমের স্পিনে পরাস্ত হয়ে ৮ রানে সাজঘরে ফেরেন জাজাই।
এরপর ক্রিজে আসেন ইব্রাহিম জাদরান। ম্যাচের চতুর্থ ওভারে মেহেদী মিরাজের তালুবন্দী হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রহমানউল্লাহ। তাসকিনের বলে আউট হওয়ার আগে দুই বাউন্ডারি ও এক ছয়ে ১৬ রান করেন তিনি।
পরে ইব্রাহিমের সঙ্গে জুটি বাঁধতে উইকেটে আসেন করিম জানাত। অবশ্য তাতেও কোনো সুফল পায়নি সফরকারীরা। শরিফুলের পেসে পরাস্ত হয়ে উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই সাজঘরে ফেরেন ওয়ানডেতে দূর্দান্ত সেঞ্চুরি করা ইব্রাহিম।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে রীতিমতো চাপে পড়ে যায় আফগানিস্তান। ম্যাচের ৭.৪ ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দী করে করিম জানাতকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান টাইগার দলপতি সাকিব।
চাপ সামলে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেন নবী ও নাজিবউল্লাহ জুটি। এ জুটি থেকে আসে ৩৫ রান। তবে টাইগার শিবিরে ভয় ধরানো এ জুটি ভাঙেন মেহেদী মিরাজ।
ম্যাচের ১৩তম ওভারে নাজিবউল্লাহকে লিটনের তালুবন্দী করেন মেহেদী। আউট হওয়ার আগে ২৩ রান করেন তিনি।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে চার ও ছক্কা বৃষ্টিতে দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তবে সাকিব ঘূর্ণিতে ৩৩ রানেই থামতে হয় তাকে। এরপর উইকেটে আসেন আফগান দলপতি রশিদ খান।
ম্যাচের ১৯.৩ বলে মুস্তাফিজকে বাউন্ডারি হাকিয়ে টি-২০ ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতক তুলে নেন মোহাম্মদ নবী। এরপর আরো ১ রান যোগ করেন তিনি। ফলে দলের দুঃসময়ে ক্রিজে এসে শেষ পর্যন্ত লড়ে ৫৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন নবী। এতে আফগানদের ইনিংস থামে ১৫৪ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান।
আরও পড়ুন>> টাইগারদের বোলিং তাণ্ডবে বিপর্যস্ত আফগানরা
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এদিন বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন রনি তালুকদার ও লিটন দাস। তবে ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন রনি। ফারুকীর বলে আউট হওয়ার আগে ৪ রান করেন তিনি।
এরপর দলের হাল ধরতে ক্রিজে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেটের আচরণ বুঝে স্ট্রাইক রোটেট করতে থাকেন তিনি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন লিটনও।
ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারে মুজিবের বলে দূর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন শান্ত। এতে ১২ রানেই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দেন শান্ত।
দলের হাল ধরতে উইকেটে আসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অবশ্য টাইগার কাপ্তানের সঙ্গী হওয়ার আগেই উইকেট বিলিয়ে দেন লিটন। এ ম্যাচে ১৯ বলে ১৮ করেন তিনি।
আফগান বোলারদের চোখে চোখ রাঙিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নিতে থাকে সাকিব-হৃদয় জুটি। অবশ্য ফরিদের বলে ডিপ পয়েন্টে করিম জানাতের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন সাকিব। এ ম্যাচে তিন বাউন্ডারিতে ১৯ রান করেন টাইগার অধিনায়ক।
উইকেট এসেই ফরিদের বলে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়তে গিয়েছিলেন শামীম পাটোয়ারী। অবশ্য আম্পায়ারের কারণে জীবন পেয়েছেন তিনি। যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। তবে তাতে সফল হননি এই লেগি।
চাপ সামলে ধীরে ধীরে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেন শামীম-হৃদয়। এ জুটিতে ৭৩ রান আসে। দলকে জয়ের প্রান্তে এনে ভুল শটে উইকেট বিলিয়ে দেন শামীম। রশিদের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে গুরবাজের তালুবন্দী হন তিনি। এতে ৩৩ রানেই থামতে হয় তাকে।
আরও পড়ুন>>সিলেটে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা
এরপর বাইশ গজে আসেন মেহেদী মিরাজ। তবে করিম জানাতের বলটি মিডউইকেটে খেলতে গিয়ে নবীর তালুবন্দী হন মিরাজ। এরপরের দুই বলে তাসকিন ও নাসুম আউট হয়ে করিমকে হ্যাটট্রিকের স্বাদ দেন। এতে ম্যাচে মোড় নেয় নাটকীয়তার। তবে উইকেটে এসেই হাত খুলে বাউন্ডারি আদায় করে নেন শরিফুল ইসলাম। ফলে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টাইগাররা।
আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট শিকার করেন করিম জানাত।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.