ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আগামী চার মাসের মধ্যেই পতন হবে বলে দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ আমাদের কাছে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত। আওয়ামী লীগ এত বড় একটা দল, যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই দলকে মানুষ এখন ঘৃণা করে। সেই দলের পদত্যাগ চায় সর্বস্তরের মানুষ।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাধানীর পল্টনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে ছাত্র সমাজের ভূমিকা শীর্ষক ওই সভার আয়োজন করে ভাসানী ছাত্র পরিষদ।
আরও পড়ুন>> বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম
এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্তর্জাতিক মহলও জোড় দিয়েছে। এখন সবার একটাই প্রশ্ন- শেখ হাসিনা কবে যাবে, আগামী চার মাসের মধ্যে এই সরকারের পতন হতে হবে। চার মাসের মধ্যেই নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগেই যদি সরকারের পতন না হয়, তবে বুঝতেই পারছেন আমাদের কপালে কি আছে।
নাগরিক ঐক্যের এই নেতা বলেন, আমারা যারা এই দেশের নাগরিক তাদের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নাই। কিছুদিন আগে দেশের একটি গ্রুপ বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার করে। আদালত সেটা তদন্ত করতে গেলে সেই তদন্ত আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাদের বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নাই।
দেশের নানা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু আজকে ছাত্রসমাজ গত সাড়ে ১৪ বছরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি।
ক্ষমতাসীন দলের ওপর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আন্দোলন ভাঙতে পারে, গড়তে পারে না। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় তখন তারা একটা মিছিল করতে পারেনি, ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলা হয় তখনও তার প্রতিবাদে একটা মিছিল করতে পারেনি। তারা পারে আন্দোলন ভাঙতে। আন্দোলনে গুলি চালাতে। আমরা যখন কোনো কর্মসূচি দেই, তখন তারা পাল্টা শান্তি কর্মসূচি দেয়। আবার আমাদের সমাবেশে গুলি চালিয়ে অশান্তি করে।
সভায় অন্যদের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন যে রাজনৈতিক সংকট তা অতীতের সব সংকটকে ছাড়িয়ে গেছে। এই সরকার টিকে আছে ভয় তৈরির মধ্যদিয়ে। আজকে আদালতকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সরকার দেশকে দুই ভাগ করে দিয়েছে। একটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আরেকটা বিপক্ষের। মানে আওয়ামী লীগ করলেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তারা চুরি-ডাকাতি করলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আর বিরোধীরা ন্যায় কথা বললেও সেটা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি। এই দেশ তার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে টিকে থাকবে কি না আমাদের ভবিষ্যৎ এই জায়গায় এসে ঠেকেছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে সরকার যেকোনো মূল্যে একটা নির্বাচন করতে চায়। তারা তাদের নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুত করছে। তারা তাদের নেতাকর্মীদের বলছে যদি আবার ক্ষমতায় না আসা যায়, তবে এক রাতে সব শেষ হয়ে যাবে। আমরা বলতে চাই, সরকার যখন এই ধরনের কথা বলছে তার মানে সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটা উপনিবেশবাদ কায়েম করেছে যে, যারা আওয়ামী লীগ করে না তারা এই দেশের নাগরিকই না। চাকরি-বাকরি সব ক্ষেত্রেও এই বিভাজন তারা তৈরি করেছে। আজকে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দূর করতে হবে। সব শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধ হয়ে গুটিকয়েক সন্ত্রাসীকে ধাওয়া করতে হবে। ছাত্র সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণঅভ্যুত্থান তৈরি করতে হবে।
ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আহম্মেদ শাকিলের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ দুলাল হোসেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.