প্রতারণার ফাঁদে ফেলে শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ কর্ণফুলির জসিমউদ্দীনের বিরুদ্ধে
বিশেষ প্রতিবেদক
দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সঞ্চয় ভিত্তিক অসংখ্য কো-অপারেটিভ সমিতি গড়ে উঠেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ বেশী মুনাফার আশায় এসব সমিতিতে টাকা লগ্নী করে বার বার প্রতারিত হচ্ছে।
এ প্রতারক চক্র নানা ছল-চাতুরী করে গরীব এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনই একটি রাজধানীল মিরপুরে পল্লবীতে গড়ে ওঠা এসবের মধ্যে কর্ণফুলি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ স্যোসাইটি অন্যতম। প্রতারণা ফাঁদে ফেলে জালজালিয়াতি করে এই কো অপারেটিভের কর্ণধর জসিমউদ্দীনের বিরুদ্ধে রয়েছে শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।
একসময় অফিসে তালা মেরে অফিস বন্ধ করে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এ সব প্রতারিত লোকজনের দুঃখ দুর্দশা অবর্ননীয়। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা। এ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র একটি শক্তিশালী অদৃশ্য শক্তির ইশারায় চলে। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় এ অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন।
আরও পড়ুন…আজ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
সঞ্চয় প্রবন নিম্ন আয়ের লোকজন আপদকালীন সময়ের জন্য অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করে এসব প্রতিষ্ঠানে জমা রাখে। অনেক সময় মাস ভিত্তিক মুনাফায় স্থায়ী আমানতে টাকা জমা রাখে। পরে দেখা যায় সুদ আসলসহ জমানো সব টাকাই খোয়াতে হয়। এমন একটি কোম্পানি যার নাম কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। রাজধানীর পল্লবীতে ছিল এর মূল অফিস। ১৮ বছর আগ থেকে এ সমিতির যাত্রা শুরু। সমিতির মূল কর্ণধার মোঃজসিম উদ্দিন যিনি কখনো আমানতকারীদের সামনে আসেনি। নিম্ন আয়ের প্রায় ৩০ হাজার আমানতকারী এ সমিতিতে টাকা জমা করে।
মাসের শেষে প্রতি লাখে ৩০০০ টাকা লাভের ঘোষণা করা হয় এতে স্বল্প বেতনভুক্ত কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, দারোয়ান, ফেরিওয়ালা ও রিকসাওয়ালা, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারী সমিতিতে টাকা লগ্নী করে।
এদের মধ্যে অনেকে আবার মাসিক বিশেষ স্কিমে টাকা জমা করে। সমবায় সমিতি আইনে এ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনকৃত হলেও এরা অবৈধভাবে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মতো লেনদেনের কার্যক্রম চালায় যা সম্পূর্ণ সমবায় সমিতি আইন বর্হিভূত। সম্প্রতি এ কো-অপারেটিভেরও অর্থ আত্মসাতের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে যা নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে তোলপাড় হয়ে যায়। জানা যায় আমানতকারীরা অফিসে গিয়ে তাদের আমানতের টাকা চাইতে গেলে কোম্পানীর কর্মচারীসহ ভাড়াটিয়া গুন্ডারা আমানতকারীদের মারধর করে। নানাভাবে নিপিড়ন নির্যাতন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাড়িয়ে দেয়।
পরে জানা যায় আমানতকারীদের শত কোটি জমাকৃত টাকা নিয়ে পরিচালনাকারীরা উধাও হয়ে যায়। র্যাব ৪ এর প্রধান মোজাম্মেল হক গত কিছুদিন আগে কাওরান বাজারের র্যাব অফিসের মিডিয়া সেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
আরও পড়ুন…প্রকৃত পাওনাদার ইভ্যালির অর্থ ফেরত পেতে পারেন: হাইকোর্ট
কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিল আহমদ সহ ১০ জন কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় সমিতি ১০০ কোটির বেশী টাকা লেনদেন করে অথচ সমিতির একাউন্টে আছে মাত্র ৮০/৮২ লাখ টাকা। আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে উদ্যোক্তারা বিপুল অর্থ সম্পতির মালিক বনে যায় বলে সাংবাদিক সম্মেলনে র্যাব ৪ প্রধান জানায়। তবে উদ্যোক্তাদের এসব সম্পত্তির বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সমিতির অন্যতম কর্ণধার মোঃজসিম উদ্দিন তার নামে ৮ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে বলে সূত্র জানায়। এছাড়াও মোঃজসিম উদ্দিনের নামে বসুন্ধরা আবাসিকে একাধিক ফ্ল্যাট, হিড বাংলা স্কুলের সাথে বিল্ডিং এর ৩য় তলার পুরো ফ্লোর(যার আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি টাকা)।গাজীপুরে বিপুল পরিমান জায়গা তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে এবং রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে তার পরিবারের সদস্যদের দোকান রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
পর্দার অন্তরালে থাকা মোঃ জসিম উদ্দিন যিনি মুল কর্ণধার হিসাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তিনি দামী গাড়ি ও আলিশান ফ্লাটে বসবাস করতেন, লাখ টাকার বিদেশী পারফিউম ব্যবহার করে ফাইভ স্টার হোটেলে রাত্রি যাপন করতেন মদ ও জুয়ার আসরে নিয়মিত থাকতেন এবং নর্তকীর নাচে তার ঘুম ভাংতো।
সমিতির টাকায় মাঝে মাঝে বিদেশ গিয়ে আনন্দ ফুর্তি করতেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। কোটি কোটি টাকা লোপাট করার পরেও মোঃ জসিম উদ্দিন এখনো গ্রেফতার হয়নি তার বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।যে সব মামলা গোয়েন্দা শাখা সিআইডিতে তদন্তনাধীন।
আরও পড়ুন…প্রাথমিকে প্রথম ধাপের শিক্ষক নিয়োগ ৩১ জানুয়ারির মধ্যে
আমানতকারীরা তাদের পাওনা টাকার জন্য দেখা করতে গেলে তখনই র্যাব অফিস ও থানা থেকে টেলিফোন আসছে বলে জানায় এবং উপস্থিত গ্রাহকদের তা বুঝানোর চেষ্টা করে। বর্তমানে মো. জসিম উদ্দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্র ছায়ায় আছে বলে জানা যায়।
এ দিকে আমানতকারীরা তাদের পাওনা আদায়ের জন্য মানববন্ধন ও গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি নিত্যদিনই পালন করছে। এবং তারা প্রতারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে ভুক্তভোগিরা বলেন প্রতারক এই জসিমের খুঁটির জোর কোথাং?। চলবে…
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.