সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষসহ নানাবিদ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা রাঙামাটিতে পর্যটকদের আগমন কমে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ আঞ্চলিকদলগুলোর নানা অপতৎপরতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে রাঙামাটির পর্যটন খাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারনে রাজনৈতিক পঠপরিবর্তনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বন্যা, সর্বশেষ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারনে পাহাড়ের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
নিজেদের পুজি ভেঙ্গে জীবন রক্ষা করে বেঁেচ থাকার চেষ্ঠা করছে অত্রাঞ্চলের পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়িরা। বিশ^ পর্যটন দিবসেও রাঙামাটিতে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি। এদিকে “পর্যটন শান্তির সোপান এই প্রতিপাদ্যে” শুক্রবার রাঙামাটিতে আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে দ্বায়সারাভাবে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করেছে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন…রাঙামাটিতে সংঘর্ষে আহতদের আর্থিক সহায়তা দিলো জামায়াত
শুক্রবার (২৭শে সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের আয়োজনে কমপ্লেক্স সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব পর্যটন দিবসের আলোচনা সভায় রাঙামাটি জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার রিজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় রাঙামাটি টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মহিউল ইসলাম, পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর শামীম হোসাইনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চল। পাহাড়ের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য এলাকাকে আধুনিক পর্যটন নগরীতে পরিণত করতে পারলে পর্যটন শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে। তাই সকলকে যার যার অবস্থান থেকে পাহাড়ের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে সকলকে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয়।
এদিকে, প্রাকৃতিক সৌন্দয্য যেন উপচে পড়ছে পাহাড়ে। গত একমাসে লাগাতার বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে টইটুম্বুর কাপ্তাই হ্রদ এখন পূর্নযৌবনা। হ্রদের চারদিকে সবুজায়নে বেষ্টিত পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে দুচোখ জুড়িয়ে যায়। জেলার অন্যতম আইকন হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে আছে গত প্রায় দেড় মাস। এই সেতু ঘিরে গড়ে উঠা শতাধিক ভাসমান দোকানীরা এখন বেকার সময় কাটাচ্ছে। পর্যটক না থাকায় এসব দোকানীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদের তীরে বেধে রাখা হয়েছে পর্যটক বিহীন কয়েকশো দেশীয় ইঞ্জিন বোট।
রাঙামাটি পর্যটনের ট্যুারিষ্ট বোট চালক মো. আলমগীর বলেন, ‘এক মাস ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে ঝুলন্ত সেতু। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবং পাহাড়ে সংঘর্ষের কারণে কোনো পর্যটক নেই। ফলে আমরা খুবই কষ্টে আছি।’ ‘প্রতি বছরই কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ব্রিজটি ডুবে যায়। পর্যটন কর্তৃপক্ষ যদি সংস্কার করে আরো উঁচুতে ব্রিজটি তৈরি করেন, তাহলে সেটি আর পানিতে তলিয়ে যাবে না।’
টেক্সটাইল দোকানীরা জানান, ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যাওয়ায় অনেক পর্যটক এসে ফিরে গেছে। তাদের কোনো পণ্যের বেচাবিক্রি নেই। প্রতি বছরই সেতুটি ডুবে যায়। ফলে ব্যবসায় লোকসান হয়। যদি সেতু থেকে পানি নেমে যায় তাহলে পর্যটকরা আসতে শুরু করবে, বেচাকেনা শুরু হবে।
আরও পড়ুন…পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করে হামলার শিকার কৃষক
এদিকে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ঘোষনায় মেঘের বাড়ি খ্যাত সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে তিনদিন পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সময় পার হয়ে গেলেও সেখানে পর্যটকের সমাগম আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট্যরা। বর্তমানে সাজেকে ১২৭টি রিসোর্ট এবং ১১৬টি রেস্টেুরেন্ট রয়েছে। ব্যবসায় লোকসানের কারণে অনেক কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈন উদ্দিন সেলিম জানান, গত দুই-তিন মাসে রাঙামাটিতে তেমন কোনো পর্যটকের আগমন ঘটেনি। আবাসিক হোটেলগুলোতে বুকিং নেই। কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায়িরা।
এদিকে, রাঙামাটি পর্যটন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, গত ২৩ আগস্ট থেকে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু পানিতে নিমজ্জিত। এখনো সেতুর পাটাতন পানিতে ডুবে আছে। আশাকরি, কয়েকদিনের মধ্যে সেতুর পাটাতনের পানি শুকিয়ে যাবে। আবারো পর্যটকরা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
ইবাংলা/ আএ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.