“৩১ দফা এমন বিষয় নয়, আমরা কখনও পরিবর্তন করতে পারব না” – বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন যে সময়, কাল, দেশ এবং মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী তারা যেকোনো বিষয় পরিবর্তন করতে এবং নতুন বিষয় যুক্ত করতে প্রস্তুত।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়াপারসনের কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এমন একটি দল, যার কাছে মানুষ প্রত্যাশা করে। এ দলটি দেশের জন্য। দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করবে এবং অবদান রাখবে।
এ সময় ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানুষের কাছে যাচ্ছো দলের প্রতিনিধি হিসেবে। যাদের কাছে যাচ্ছো, তারা ভবিষ্যতে এ দেশের নেতৃত্ব দেবে। তাদের কথা শুনবে। তাদের মতামত গ্রহণ করবে। কারণ, তাদের মধ্য থেকে ভবিষ্যত সম্ভাবনাময়ী মানুষ বেরিয়ে আসবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত ৫ আগস্টের আগের প্রেক্ষাপট ছিল একরকম। এখন প্রেক্ষাপট হচ্ছে অন্যরকম। আমরা করব, আমরা বলব। আমরা কীভাবে কী কী করব, সেটি আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। তোমদের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরা লড়েছি, আমরা গড়ব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবি উল্লাহ ও তারেক রহমানের উপদেষ্টা ডক্টর মাহদী আমিন।প্রশিক্ষণবিষয়ক এই কর্মশালাটি পরিচালনা করেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। এতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ জাতির সামনে উপস্থাপন করেন।
‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’র রূপরেখা মধ্যে রয়েছে-
(১) সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন,
(২) সম্প্রীতিমূলক সমন্বিত রাষ্ট্রসত্ত্বা প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় সমন্বয় কমিশন গঠন,
(৩) নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন,
৪) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা,
(৫) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময়সীমা নির্ধারণ,
(৬) আইনসভায় উচ্চকক্ষের প্রবর্তন,
(৭) সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন,
(৮) নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সংশোধন,
(৯) স্বচ্ছতা নিশ্চিত করণে সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পূর্ণগঠন,
(১০) জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রবর্তন ও সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগ আইন প্রণয়ন,
(১১) প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন,
(১২) মিডিয়া কমিশন গঠন,
(১৩) দুর্নীতি প্রতিরোধে দৃশ্যমান কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ,
(১৪) সর্বস্তরে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা,
(১৫) অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন,
(১৬) ধর্মীয় স্বাধীনতার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা প্রদান,
(১৭) মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা শ্রমের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা,
(১৮) শিল্প, বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি খাত আধুনিকায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা,
(১৯) জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন,
(২০) প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা,
(২১) বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বশাসিত ও ক্ষমতাবান করা,
(২২) শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান,
(২৩) আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন,
(২৪) নারীর ক্ষমতায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ,
(২৫) চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা,
(২৬) ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির বাস্তবায়ন করা হবে,
(২৭) কৃষকের উৎপাদন ও বিপণন সুরক্ষা দিয়ে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা,
(২৮) সড়ক, রেল, নৌ পথের আধুনিকায়ন ও বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা,
(২৯) জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ এবং নদী শাসন ও খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা,
(৩০) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং আণবিক শক্তির উন্নয়ন ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং
(৩১) যুগোপযোগী, পরিকল্পিত, পরিবেশবান্ধব আবাসন এবং নগরায়ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.