কেজিপ্রতি ৬ টাকা ইউরিয়া সারের দাম একবারেই বাড়ানো হয়েছে । কৃষককে এখন ১৬ টাকার পরিবর্তে ২২ টাকা খুচরামূল্যে প্রতিকেজি ইউরিয়া সার কিনতে হবে। একবারে সারের ৩৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
কৃষির ওপর এর প্রভাব কী পড়তে পারে’ এ বিষয়ে কথা হয় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং বাংলাদেশের কমিনিউস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে।
রাশেদ খান মেনন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বিশ্ববাজারে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, এতে সারের মূল্যবৃদ্ধি একেবারে আকস্মিক নয়। ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জমিতে অধিক পরিমাণে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার স্বার্থে দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন…১ বছরে ১৬৬৩ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে
‘তবে আমি মনে করি, খাদ্য উৎপাদনে যেন প্রভাব না পড়ে, তার জন্য বিকল্প ভাবনায় গুরুত্ব দিতে হবে। যদি বিকল্পভাবে উৎপাদন না বাড়ানো যায়, তাহলে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য আরও অনেক বেড়ে যাবে।’
খাদ্যদ্রব্যের বাজার অস্থির। কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় না। এমন পরিস্থিতিতে সারের দাম বৃদ্ধি বাজার আরও বেসামাল করে তুলবে কি না? জবাবে সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সারের দাম বাড়লে কৃষিমূল্য বাড়বেই। কৃষিমূল্য কমিয়ে রাখাই হচ্ছে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এটি সরকার আসলে কীভাবে মোকাবিলা করে, তা দেখা দরকার। এখানে চট করে হ্যাঁ বা না বলার মতো কিছু নেই। আমি বলছি, কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে প্রথমে নজর রাখতে হবে।’
বিকল্প পন্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারের বণ্টনটা সরকার যথাযথভাবে করে না। এখানে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এই ভর্তুকি আসলে কারা পায়, প্রকৃত কৃষক লাভবান হয় কি না, তা আগে ভাবতে হবে। প্রকৃত কৃষক লাভবান হলেই খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে, কৃষির উপকার হবে। জৈব সারের উপরেও গুরুত্বরোপ করা যায়। ডিজেল ও রাসায়নিক সারের দাম বাড়াতে হলে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। আরও গভীরভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সারের মূল্যবৃদ্ধি কৃষকের সর্বনাশ ডেকে আনবে উল্লেখ করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সরকার ইউরিয়া সারের ৩৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কৃষক খুবই বিপদে আছে। সারের মূল্যবৃদ্ধি কৃষকের বিপদ আরও বাড়াবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অন্যায্য, অন্যায় ও জুলুম বলে মনে করি। কৃষকের সর্বনাশ ডেকে আনতেই সারের দাম বাড়ানো। কৃষিব্যবস্থা ও কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
আরও পড়ুন…বিশ্ব করোনায় দিনের ব্যবধানে মৃত্যু কমেছে প্রায় ৫০০
‘আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ছে। সরকার এমন যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ানোর কথা বলছে।’ জবাবে সেলিম বলেন, ‘সরকার তো ধনীদের জন্য লাখ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়, ঋণ সুবিধা দেয়, কর রেয়াত দেয়। সরকারের উচিত হচ্ছে, ধনীক শ্রেণির জন্য যে ভর্তুকি, তা বন্ধ করে কৃষকের জন্য বরাদ্দ দেওয়া। কৃষক না বাঁচলে কেউ রক্ষা পাবো না। ’
‘সরকার বলে আমরা প্রাইভেট সেক্টরের পক্ষে। ভালো কথা। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রাইভেট সেক্টর হচ্ছে কৃষি। অথচ, কৃষির উপর বাড়তি ব্যয় চাপিয়ে দিচ্ছে। গার্মেন্ট মালিকদের কর রেয়াত দিচ্ছে, ব্যাংক সুবিধা দিচ্ছে, প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকরা সুবিধার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।’
সরকারের আসলে পাবলিক বা প্রাইভেট সেক্টর নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা কৃষকের অধিকার নিয়ে কাজ করছি এবং সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছি।’- উল্লেখ করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
ইবাংলা/জেএন/৮ আগস্ট,২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.