ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের পর সেই ডাকাত দলের কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছিল টাঙ্গাইলের মধুপুরের কুড়ালিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে, ঐ বাসটি কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে এসেছিল । (৩ আগস্ট) বুধবার ফজরের আজানের আগে তারা সেই বাড়িতে পৌঁছায় এবং সূর্যোদয়ের পর বিদায় নেয়।এবং ঐ বাড়িটি ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য রতন হোসেনের মায়ের নানির বাড়ি।
এর আগে, (২ আগস্ট) মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাসটির নিয়ন্ত্রণে নেয় ডাকাতেরা। পরে ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের হাত, মুখ, চোখ বেঁধে মোবাইল, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে।
আরও পড়ুন…বিশ্বজুড়ে করোনায় কমেছে শনাক্ত বেড়েছে মৃত্যু
তারপরে ওই বাসে থাকা এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। চলন্ত অবস্থায় টানা তিন ঘণ্টার বিভীষিকা পর বাসটি বিভিন্ন স্থান ঘুরে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া নামক স্থানে বাসের গতি কমিয়ে ডাকাতরা নেমে যায়। পরে বাসটি শিকার হয় দুর্ঘটনার ।
এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে গেলেও মাহমুদুর রহমান মুন্না ওরফে রতন কয়েকজনকে নিয়ে মধুপুরের কুড়ালিয়া ইউনিয়নের সিটি ব্রিকসের পাশের একটি বাড়িতে কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় নেয়। ওই বাড়িটি রতনের মা বেলী বেগমের নানির বাড়ি। রতনের নানিও বাস করেন পাশের বাড়িতেই।
রতনের নানির মা আনোয়ারা বলেন, রতন ৪ থেকে ৫ দিন আগে ফজরের আজানের আগে আমার বাড়িতে আইছাল। কতহন বাদে আবার চইলা গেছে। আমি থাকপারও দেইনাই খাবারও দেই নাই।
রতনের নানি জহুরা বলেন, আমরা ভোররাইতে মেলা কথাবার্তা শুনছি। ঘর থিকা বাইর অইনাই। বেলীরে আমরা বাদ দিয়া দিছি। ওর পোলা ফজরের আজানের আগে আমার মায়ের বাড়িতে আইছাল। আমার মায়ের কাছেই হুনছি। কতক্ষণ থাইকা চইলা গেছে।
আরও পড়ুন…আজ পবিত্র আশুরা
ওই বাড়ির জুয়েলের স্ত্রী জেরিন বলেন, রতন রাইত তিনটার মেলা পরে আইছিল। আছিলও কিছুক্ষণ। রতন যে ঘরে আশ্রয় নিছাল সকালে সেই ঘর মুছবার যাইয়া মোবাইলের তিনটা ব্যাক কভার পাইছি। আর ঘরের সাইটে একটা ছুরি পাইছি।
এদিকে ডাকাত দলের সদস্য র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রতনের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ধলপুর গ্রামে। সোমবার দুপুরে ধলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে রতনের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রতনের মা বেলী বেগম গত ১০ থেকে ১২ বছর আগে কুড়ালিয়া থেকে এসে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বেলীর আগের সংসারের সন্তান রতন ও আয়নাল এবং তার বর্তমান স্বামী শাকিল সকলেই ঢাকায় থাকেন। শুধুমাত্র রতনের মা বেলী বেগম ও তার একমাত্র ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে দিনাতিপাত করেন। সোমবার জোহর নামাজের পর তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।
এলাকাবাসী জানান, রতনের মা বেলী বেগমের ভয়ে এলাকার লোকজন তটস্থ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, বেলীর আগের ঘরের ছেলে রতন ও আয়নালের নামে একাধিক ডাকাতি ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। এর আগেও তারা কারাভোগ করেছেন। কিছু বললেই বেলি তেড়ে আসেন। থানায় গিয়ে মামলা করার ভয় দেখান। ৮০ বছর বয়সী মীর আলী বলেন, আমাদের বাড়ির লোকজনতো দূরের কথা নাতি-পুতিরাও ওই বাড়িতে যায় না।
আরও পড়ুন…ফিলিস্তিনিরা ১০০০ এর অধিক ক্ষেপণাস্র ছুড়েছে ইসরাইলে
এ ব্যাপারে মধুপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. মুরাদ হোসেন বলেন, রতনের বাড়ি মধুপুরে আমিও শুনেছি। অফিসিয়ালি কোনো বার্তা পাইনি। বিষয়টির তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। তারা যদি প্রয়োজন মনে করেন মধুপুরের বিষয়গুলোও ক্ষতিয়ে দেখবেন।
কুড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান বলেন, আমি লোক মারফত জানতে পেরেছি, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত রতনের বাড়ি মধুপুরের ধলপুর। এলাকাবাসী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন।
ইবাংলা/জেএন/৯ আগস্ট,২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.