সারাদেশের সমাবেশে চা শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করার হুসিয়ারী 

এস কে দাশ সুমন শ্রীমঙ্গলঃ

মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে সারাদেশে ধর্মঘট পালন করেছেন চা শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ৪০ টি চা বাগানে এই ধর্মঘট পালন করেন তারা। ধর্মঘটে অংশ নিয়ে শনিবার সকালে চা শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে।

এসময় চা শ্রমিকদের দাবী না মানলে ঢাকা শহরে সারাদেশের চা শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করার হুসিয়ারী দেন শ্রমিক নেতারা। চা শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে পাশে থাকার আহবান করেন তারা।

এর আগে সকাল ১১টায় ভাড়াউড়া চা বাগান, ভুরভুরিয়া চা বাগান, খাইছড়া চা বাগান, সহশ্রাধিক শ্রমিক ভাড়াউড়া চা বাগানে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে শ্রমিকরা মৌলভীবাজার সড়ক হয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের শ্রীমঙ্গল চৌমুহনী চত্বরে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে। এসময় ঢাকা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস, ট্রাকসহ শতাধিক যানবাহন আটকা পরে।

সমাবেশে বক্তরা বলেন, ‘আমরা গত ১৯ মাস ধরে মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করে আমাদের দাবী জানিয়ে আসছি। মালিক পক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমাদের সাথে টালবাহানা করছেন। সময় ক্ষেপন করছেন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে।

চা শ্রমিকদের মজুরী বাড়েনি। মালিক পক্ষের সকালের নাস্তায় যে টাকা খরচ হয় , শ্রমিকরা এক সপ্তাহেও সেই টাকা পায় না। চা বাগানের ঘরে ঘরে হাহাকার চলছে, খাদ্যেও অভাব, চিকিৎসার অভাবে দিশেহারা শ্রমিকরা।

আমরা গত মঙ্গলবার থেকে চার দিন ধরে কর্মবিরতী করলেও বাগানের কাজ বন্ধ করিনি। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের আহবানে সারা দেননি। তারা মাত্র ১৪ টাকা মজুরী বাড়াতে চায়। আমরা সেটা প্রত্যাখান করছি। আজ দেশের প্রত্যেকটি চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের নায্য অধিকার আদায় করার জন্য রাজপথে নেমেছেন। আমাদের দাবী আদায় না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।

সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি পংকজ কন্দ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগামীকাল রোববার ও আগামী সোমবার (জাতীয় শোক দিবস) আন্দোলন স্থগিত করেছি। আগামীকাল সভা, সমাবেশ , বিক্ষোভ মিছিল হবে না। রোববার ও মঙ্গলবার চা বাগানে ছুটি থাকায় কাজ বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার থেকে আবার ধর্মঘট চলবে।’

এসময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরাগ বারই, সহ সভাপতি পংকজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি।

এদিকে উপজেলার হুগলিছড়া চা বাগান, আমরাইলছড়া চা বাগান, মাখড়িছড়া চা বাগান, সাতগাঁও চা বাগান ও ইছামতী চা বাগানের চা শ্রমিকরা এক হয়ে এক বিশাল সমাবেশ, মানববন্ধন ও কর্মবিরতী পালন করেন।

এসময় মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আমরাইলছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি চিতমোহন দাশ, সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিলন শীল, সাবেক ইউপি সদস্য লছমন কানু, সাবেক পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল বুনার্জী, ওয়ার্ড সদস্য বিকাশ দত্ত, বাগানের সর্দার সন্তোষ কর্মকার, দুলাল দাস, চা শ্রমিক জহরলাল তাঁতি প্রমূখ।

আরও পড়ুন…মতিঝিল ৯ নং ওয়ার্ড আ. লীগের সভাপতি হতে যাচ্ছে ক্যাসিনো সাঈদের আস্থাভাজন মাইনু!

চা শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিটিএ) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে, এই আলোচনা চলমান অবস্থায় তাঁদের এই কর্মবিরতি সম্পূর্ণ বেআইনি।

এমনি চায়ের দাম এখন কম। মালিকরা উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। তারপর যদি ভরা মৌসুমে তাঁরা যদি এভাবে কর্মবিরতি করে থাকে, তাহলে মালিকরা আরো বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে চা বাগানের লোকসান হবে। শুধু তাই নয়, শ্রমিকরা ও পাতি তুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এখন তো ভরা মৌসুম, তারা সপ্তাহে দুই-তিন হাজার টাকা আয় করতে পারে। কিন্তু এই কর্মবিরতির জন্য তাঁরা পারছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা লেবার ডাইরেক্টর, লেবার মিনিস্ট্রি এবং লেবার সেক্রেটারিকে জানিয়েছি বিষয়টি দেখার জন্য।’

ইবাংলা/জেএন/১৩ আগস্ট,২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us