চিটাগং সিনিয়রস ক্লাবের শোকসভা মঞ্চে বিএনপি নেতা

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় নোয়াখালী জেলা বিএনপির এক সহ-সভাপতির মঞ্চে উপস্থিতি নিয়ে চলছে না গুঞ্জন। শোক দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপি নেতার এমন উপস্থিতি ক্লাব সদস্যের মধ্যেই ছড়িয়েছে অস্বস্তি। বিএনপিও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বলে সূত্র জানায়।

তবে শোকসভায় উপস্থিত নোয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন রনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি সিনিয়রস ক্লাবেরও সহ-সভাপতি। সে হিসেবে ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি সেখানে বক্তব্য রাখেন নি। এমনকি সব কার্যক্রম থেকে তিনি দূরেই ছিলেন। শুধু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে অনুষ্ঠান আয়োজনে উনার যে দায়িত্ব সেটাই তিনি পালন করেছেন।

আরও পড়ুন…অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে

অন্যদিকে, ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে সংক্ষুব্ধ অংশের ব্যক্তিরা বলছে, যদি তিনি শ্রদ্ধাবোধের তাগিদ থেকে সেখানে যেতেন তাহলেও বিষয়টা ইতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ ছিলো তাদের। কিন্তু তিনি শোকসভায় গেলেও কোন কার্যক্রমে জড়াতে ইচ্ছুক ছিলেন না। এক্ষেত্রে তাকে বাদ দিয়েই এই সভা করাটা ভালো হতো।

সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে চিটাগং সিনিয়রস ক্লাবে ক্লাব সভাপতি ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতও।

শোকসভায় বিএনপি নেতার উপস্থিতি নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিটাগং ক্লাবের একজন স্থায়ী সদস্য বলেন, ‘জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে একটা সভা। সেখানে মঞ্চের মাঝখানে বসে আছেন একজন বিএনপি নেতা। তাও নরমাল সদস্য নন, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি।

হোক তিনি ক্লাবের নেতাও; কিন্তু তিনিতো সেখান থেকে বের হয়েই খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করবেন। তাছাড়া তিনি আসলেন ছবিতেও থাকলেন কিন্তু কোন বক্তব্য দেননি। তো এভাবে উনাকে রাখারই দরকার কী ছিল অথবা পুরোপুরি ধারণ করতে না পারলে উনার থাকারও কী দরকার ছিল? বিষয়টা নিয়ে আমাদের ক্লাবের সদস্যদের মধ্যেই নানা রকমের কথাবার্তা হচ্ছে। আমারও ব্যক্তিগতভাবে এটি ভালো লাগেনি।’

আরও পড়ুন…বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আশ্রয়দানকারী দেশসমুহের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি জেলা বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবার আমি সিনিয়রস ক্লাবেরও ভাইস প্রেসিডেন্ট। যেহেতু আমার ক্লাবের প্রোগ্রাম সেটা আমি যে মত পোষণ করি না কেন… আমিতো সেখানে বক্তৃতা দেয়া থেকে বিরত ছিলাম। আমি উপস্থিত থাকতে পারি যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম। আমার রাজনৈতিক আদর্শের সাথে যাক না যাক ক্লাবের সহ-সভাপতি হিসেবে থাকতেই পারি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু সব কার্যক্রম থেকে আমি বিরত ছিলাম। আমি কেন করতে যাবো এটাতো আমার সাথে যাবেই না। ইভেন প্রেসিডেন্ট অনেকেই আমাকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করছে। আমি বললাম না এটা আমার ডিউটি না। আপনাদের প্রোগ্রাম সুন্দরভাবে তৈরি করে দেয়ার জন্য যেহেতু আমি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সেটা আমি করে দিবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান, ‘আলাউদ্দিন তো ক্লাবের ভাইস প্রসিডেন্ট হিসেবে ছিলেন। এখানেতো তিনি বক্তৃতাও করেন নাই। আমরা মিলাদ কোরান তিলয়াত আর আলোচনা সভা করেছি।’

তিনি বক্তব্য করেন নি সেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তাহলে শুধু কমিটির নেতা হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকা বিষয়টা কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে দেবাশীষ পালিত বলেন, ‘এটা ক্লাব প্রেসিডেন্ট ভালো বলতে পারবেন। আমি সাধারণ সদস্য। উনারা আয়োজন করেছেন, ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সেখানে ছিলেন। আমরাও ছিলাম। আমরা বক্তব্য দিয়েছি। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আমার কথা বলা ঠিক হবে না। প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেন।’

আরও পড়ুন…জাতীয় শোক দিবসে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য ভাইরাল

এই বিষয়ে কথা বলতে সিনিয়রস ক্লাবের সভাপতি ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়টি বিএনপি নেতারা কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নগর বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘তিনি যেহেতু নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতা সেহেতু এই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আপনি শামীম ভাইয়ের সাথে কথা বলুন।’

দল হিসেবে বিএনপি বিষয়টি কিভাবে দেখছে তা জানতে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম জানান, আমি খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলবো। পরে হোয়াটসঅ্যাপে তাকে শোকসভায় জেলা বিএনপি নেতার উপস্থিতির ছবিটি পাঠিয়ে আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি ম্যাসেজটি সিন করে কোন রিপ্লে দেননি।’

সভায় ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. জাহেদুল ইসলাম (মিরাজ), ওয়ালিউল আবেদীন সাকিল এবং ডা. মোহাম্মদ ইমাম হোসেন (রানা)।

ইবাংলা/টিএইচকে/১৭আগস্ট,২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us