দেশে শব্দ দূষণের ৭০ শতাংশ উৎস যানবাহন। কয়েক ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করলে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ ঘূর্ণিরোগ, মাথা বনবন করা, বমি ভাব ও ক্লান্তির সমস্যায় ভোগেন। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সমীক্ষায় এ চিত্র উঠে এসেছে।এ শব্দ দূষণের ফলে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সাধারণভাবে মোবাইলফোনে কথা শুনতে অসুবিধা হয় তাদের ১৫ দশমিক ৫ শতাংশের।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
ক্যাপসের গবেষণায় হবিগঞ্জ শহরের তিনটি স্থান শব্দ দূষণে রেড জোনে স্থান পেয়েছে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী শব্দের মানমাত্র ৭০ ডেসিবেল হওয়ার কথা থাকলেও এ শহরের বেবিস্ট্যান্ড মোড়ে ৮৫, নতুন বাসস্ট্যান্ড ৮৩ এবং কালিবাড়ি ক্রস রোডে রয়েছে ৮০ ডেসিবেল। একই শহরের পোস্ট অফিস রোডে ৫৩, পুরান মুন্সেফ রোডে ৫৪ এবং সমুর্তা রাইস মিল এলাকায় মানমাত্রা ৫৭ ডেসিবেল হওয়ায় এ এলাকাগুলো স্থান পেয়েছে গ্রিন জোনে।
সভায় জানানো হয়, দেশে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ থাকলেও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ যানবাহনে অবৈধভাবে এ হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। চোরাই পথে আসা ও স্থানীয়ভাবে হাইড্রোলিক হর্নে উৎপাদন ঠেকাতে না পারলে সমস্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে।
আরও জানানো হয়েছে, অনুমোদিত মাত্রার অতিরিক্ত শব্দ উৎপন্ন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ কারণে মানুষ শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, চাপা উত্তেজনা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতায় ভোগে ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিহার করে। উচ্চ শব্দ শিশু, গর্ভবতী মা ও হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
শব্দ দূষণের কারণে গর্ভবতী মায়ের সন্তানসহ মৃত্যুর রেকর্ডও রয়েছে।
উচ্চ শব্দে বিরক্তি, নেতিবাচকতা, রাগ ও ক্লান্তি দেখা দেয়, স্মৃতিশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা কমে যায়, ঘুমের বিঘ্নতা ঘটে এবং আকস্মিক উচ্চ শব্দে মানবদেহের রক্তচাপ এবং হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয় মাংসপেশির সংকোচন করে, পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়, শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড চাপা দেয়।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় এ মতবিনিময় সভা বাস্তবায়ন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান ও সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিন্টু চৌধুরী। এ সময় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতল এলাকায় শব্দের মানমাত্র নিয়ন্ত্রণের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন…আমরা মুসার চরের মানুষ আর কতদিন নদীর পানি খামো
সভায় বক্তব্য রাখেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুসদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নাসির আহমেদ পাঠুয়ারী, হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মিজানুর রহমান, ক্যাপসের গবেষক তৌফিকী ইলাহি হোসেন ও রিয়াজুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল প্রমুখ।
ইবাংলা/জেএন/০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.