সাফ ফুটবলে ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ক্রীড়াঙ্গন ডেস্ক

প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল টিম। ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে এসে ভুটানকেও উড়িয়ে দিলেন সাবিনা খাতুনের দল। সিরাত জাহান স্বপ্নার শটে বল জালে জড়াতেই ডাগআউটে হেলেদুলে নাচতে দেখা গেল গোলাম রব্বানী ছোটনকে।শিষ্যদের মন ভরানো ফুটবল নতুন করে হাসতে শেখাচ্ছে সদা গম্ভীর রূপে থাকা বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের কোচকে।

এবারের সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের নারী দল একেকটা ম্যাচে যা করে দেখাচ্ছে, তাতে ডাগআউটে স্বয়ং রামগরুড়ের ছানাও থাকলে হয়তো নিষেধ ভুলে লাফিয়ে উঠত গোলের আনন্দে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।সেমিফােইনালে ভুটানের মুখোমুখি লড়াইয়ে সাবিনাদের তোপের মুখে পাত্তাই পেলেন না ভুটান। ৮-০ গোলের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে ২০১৬ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো সাফের ফাইনালে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।

আরও পড়ুন…বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের আগেই হেরে গেল ফারজানা-জাহানারা

সাফে ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় বড় জয়। এর আগে ২০১০ সালে ৯-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন সাবিনা। আজ করেছেন এবারের টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। দুই অর্ধেই বাংলাদেশ গোল করেছে চারটি করে।একটি করে গোল স্বপ্না, কৃষ্ণা রানী সরকার, ঋতুপর্ণা চাকমা, মাসুরা পারভীন ও তহুরা খাতুনের।

আগামী সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) হবে টুর্নামেন্টের ফাইনাল লড়াই। সাবিনা খাতুনদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে স্বাগতিক নেপাল অথবা ভারত।

ম্যাচের ফলই বলছে, রীতিমতো একপেশে ম্যাচ। অথচ ‘ম্যাচ সহজ হবে না’, বলে সেমিফাইনালের আগে কঠিন পরীক্ষার হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন ভুটানি অধিনায়ক পেমা শেরিং। বল মাঠে গড়াতে দশরথের বৃষ্টিভেজা কাদামাখা মাঠে হুমকি ভুলে গড়াগড়ি খেতে দেখা গেল ভুটানের মেয়েদের। আর কাদা মাঠে ভুটানের বিপক্ষে চলল বাংলাদেশের গোল উৎসব।

কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ভুটানের বিপক্ষে শুরু থেকেই গোলের চেষ্টায় বাংলাদেশ সাফল্য পায় ২ মিনিট হওয়ার আগেই। মণিকা চাকমার থ্রো বল ধরে ভুটানি গোলরক্ষক সংগীতা মঙ্গারকে বোকা বানিয়ে দলকে সাফল্য এনে দেন স্বপ্না। এই গোলের পর অবশ্য বেশিক্ষণ মাঠে থাকা হয়নি স্বপ্নার। পায়ের চোটে চোখের পানিতে ১৫ মিনিটে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হয় ঋতুপর্ণা চাকমাকে।

বাংলাদেশ দলেন স্বপ্না না থাকলেও গোল করা থামেনি বাংলাদেশের। গোল করার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। ১৮ মিনিটে সহ-অধিনায়ক মারিয়া মান্দার পাস ধরে ভুটানি গোলরক্ষককে হার মানান সাবিনা। ডান প্রান্ত ধরে দুরূহ কোণ ধরে ৩০ মিনিটে মনিকার ক্রসে কৃষ্ণা রানী লাফিয়ে বল জালে জড়ালে চালকের আসনে বসে বাংলাদেশ।

পাঁচ মিনিট পর মনিকার থ্রো পাস পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্লাইড করলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি গোলকিপার। ৩৫ মিনিটে এই দফায় নিচু শটে গোল করেন বদলি ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা।

আরও পড়ুন…মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা

বিরতি থেকে ফেরেও কমেনি বাংলাদেশের গোলক্ষুধা। ৫৪ মিনিটে দলের পঞ্চম ও নিজের দ্বিতীয় গোলটি তুলে নেন সাবিনা। ডান প্রান্ত থেকে কৃষ্ণা রানী সরকারের পাসে বক্সের মাঝ বরাবর ফাঁকায় বল পান বাংলাদেশ অধিনায়ক। ঠান্ডা মাথায়, দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে এবারের সাফে নিজের সপ্তম গোলটি তুলে নেন সাবিনা।

তিন মিনিট পরেই সাবিনার ফ্রি-কিক ধরে বাংলাদেশের ষষ্ঠ গোলটি করেন ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিন। ৫৭ মিনিটে সাবিনার ফ্রি-কিক ভুটানি গোলরক্ষক আটকাতে ব্যর্থ হলে বল পান মাসুরা। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা এই ডিফেন্ডার আরেক গোলের আনন্দে ভাসান বাংলাদেশকে।ম্যাচের ৮৭ মিনিটে ঋতুপর্ণা চাকমার ক্রস থেকে বল তহুরার গায়ে লেগে জালে জড়ায়।

ম্যাচের অন্তিম সময়ে এসে টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক তুলে নেন সাবিনা খাতুন। অতিরিক্ত সময়ে মাঝমাঠ থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার পাস থেকে ভুটানি গোলরক্ষককে আবার বোকা বানিয়ে দলকে বড় জয় এনে দেন সাবিনা।

ইবাংলা/টিএইচকে/১৬সেপ্টেম্বর,২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us