নিরন্তর সবুজ বিনিয়োগের ড্রাইভে বিগত দশ বছরে টেকসই জ্বালানী সম্পদ ও ইলেক্ট্রোকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পদক্ষেপ অব্যাহতভাবে নতুন পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চীন সঞ্চয় করা প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করে আরও বেশি অঞ্চলের জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করে বিশ্বের সবুজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন এবং জাতীয় জ্বালানী ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে চীনের জ্বালানী ব্যবহারের তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে ২৬ শতাংশের বেশি। জ্বালানী পণ্যভোগে কয়লার দখল ১২.৫ শতাংশ কমেছে। বহু বছর ধরে টেকসই জ্বালানীর বিদ্যুৎ উৎপাদন ১১০ কোটি কিলোওয়াট অতিক্রম করে জলবিদ্যুৎ, বায়ু শক্তি ও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইনস্টল করা ক্ষমতার দিক থেকে চীন বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। এছাড়া, চীনের নতুন শক্তির যানের উৎপাদন ও বিক্রয় পরিমাণ সারা বিশ্ব প্রথম।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) চলতি বছর প্রকাশিত “দূষণমুক্ত জ্বালানী সম্পদ ইনোভেশন ট্র্যাক করা চীনের ওপর ফোকাস” প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন খুব অল্প সময়ের মধ্যে জ্বালানী পেটেন্ট আবেদনের প্রধান অংশগ্রহণকারীতে পরিণত হয়েছে। চীনা উদ্ভাবনকারীদের হার আরও বাড়ছে। বিশেষ করে, সৌর বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রযুক্তি এবং আলোকসজ্জার ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন…মন্থর গতিতে প্রবাসী আয়
সৌর বিদ্যুতের নমুনা হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চীনা উদ্ভাবনকারীদের প্রদান করা ব্যাটারি ও সৌর ফটোভোলটাইকের আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদনের পরিমাণ ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের প্রায় ৬ গুণে পৌঁছেছে। চীনা উদ্ভাবনকারীদের প্রদান করা ইলেক্ট্রোকার প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদনের পরিমাণ ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌর ফটোভোলটাইকের ক্ষেত্রে চীনের উদ্ভাবন প্রক্রিয়া প্রতিফলিত হয়েছে যে এটা একটি বিশুদ্ধ প্রযুক্তি, উৎপাদন থেকে উদ্ভাবনে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া।
সৌর ফটোভোলটাইকের মূল্য কমানো এবং সৌর ফটোভোলটাইকের কার্যকারিতা উন্নত করার ওপর চীনের প্রভাব জ্বালানী উদ্ভাবনে বিশ্বের চিন্তা পরিবর্তন করে ব্যাটারি ও ইলেক্ট্রোকারের ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে।
কেনিয়ার থিঙ্ক ট্যাংক আফ্রিকান নীতি গবেষণালয়ের বিশ্লেষক লুইস নিদিশু বলেন, প্রযুক্তি ও মাত্রার সুবিধা কাজে লাগিয়ে চীন একটি সুবিধাজনক, উচ্চ-কার্যকর ও দূষণমুক্ত উন্নয়ন পথ অন্বেষণ করেছে এবং বিশ্ব জ্বালানী ব্যবস্থার কার্বনমুক্ত প্রক্রিয়ায় “গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে”, বৈশ্বিক বেঞ্চমার্কিং স্থাপন করার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অভিজ্ঞতা টেম্পলেট সরবরাহ করেছে।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্রকে হত্যা , গ্রেফতার ৪
সবুজ উন্নয়ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং স্কেল অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে চীনের দৃষ্টি শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারে রাখে না, বরং চমৎকার পণ্য ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বেশ কিছু দেশে টেকসই জ্বালানী, ব্যাটারি তৈরিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নে সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করে।
উত্তর-পূর্ব কেনিয়ার গারিসা কাউন্টিতে চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মিত পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু হবার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় জনগণের জন্য বিশুদ্ধ বিদ্যুতশক্তি সরবরাহ করছে।
জানা গেছে, গারিসা ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বার্ষিক গড় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৭.৬ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টার বেশি, যা ৭০ হাজার পরিবারের কয়েক লাখ মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহার চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া, প্রতিবছর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০ হাজারের বেশি টন স্ট্যান্ডার্ড কয়লা বাঁচায় এবং হাজার হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমায়।
নিদিশু বলেন, গারিসা ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যাপকভাবে স্থানীয় পাওয়ার গ্রিডে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর দখলের হার উন্নত করেছে এবং কেনিয়ায় আরও সস্তা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাস্তবায়নের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে।
পরিপক্ব উন্নত দেশের বাজারে চীনের প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় উৎপাদকদের সবুজ রূপান্তরে সহায়তা দেয়। উসি লিড ইনটেলিজেন্ট ইকুইপমেন্ট কোং, লিমিটেড হচ্ছে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় নতুন জ্বালানী সরঞ্জাম নির্মাতা ও পরিষেবা ব্যবসায়ী। ২০২১ সালে এ কোম্পানি জার্মানিতে তার শাখা স্থাপন করে, চীনের ব্যাটারি উৎপাদন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি দেশটিতে নিয়ে গেছে। বর্তমানে স্থানীয় অংশীদারগুলোর মধ্যে রয়েছে ভক্সওয়াগেন ও বিএমডাব্লিউ’র মতো বিখ্যাত গাড়ি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, এ কোম্পানি ইউরোপের বেশ কয়েকটি ব্যাটারি উৎপাদকের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন…সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্বে কলেজ ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
জলবায়ু পরিবর্তন, পানি ও মাটি এবং আবহাওয়া দূষণসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বিভিন্ন দেশের জরুরিভাবে সবুজ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হয়। সুতরাং নিম্ন-কার্বন রূপান্তর, জলবায়ু বিনিয়োগ ও তহবিল গড়ে উঠা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী বরাদ্দ ও বাস্তব চেষ্টা চালায়।
চীন সবসময় ইতিবাচকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বাস্তব কার্যক্রম অনুশীলন করে এবং ডাবল কার্বন অর্থাৎ কার্বন পিক এবং কার্বন নিরপেক্ষতার দৃপ্তকণ্ঠে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন করে বৈদেশিক কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্প না করার কথা ঘোষণা করেছে। চীন কার্বন পিক এবং কার্বন নিউট্রাল গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে ডাবল কার্বন “১+এন” নীতিগত ব্যবস্থা গড়ে তুলে ও কার্যকর করেছে। সক্রিয়ভাবে নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন এবং সবুজ রূপান্তর ত্বরান্বিত করেছে চীন।
নীতিগত সমর্থন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বেগবান করে সবুজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন আরও বেশি সাফল্য অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটা সবুজ রূপান্তর অন্বেষণকারী দেশ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক দিক প্রদর্শন করে।
আরও পড়ুন…বরগুনায় ১০ বোতল ফেসিডিলসহ একজন আটক
ব্রাজিলের ইনস্পার ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের বিশেষজ্ঞ সার্জিও আভেরেদা বলেন, সবুজ উন্নয়ন এবং কার্বন নিরপেক্ষতা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের প্রচেষ্টা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও টেকসই ও আরও সবুজ পদ্ধতিতে অর্থনীতির উন্নয়ন করে, একটি আরও সুন্দর, আরও টেকসই বিশ্ব প্রতিষ্ঠা দ্রুততর করতে উৎসাহ ও নেতৃত্ব দিতে পারে।সূত্র : সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/১১অক্টোবর ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.