জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগ কর্তৃক প্রথমবারের মতো “ন্যাশনাল সেমিনার অন বায়োটেকনোলজি ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-২০২২” শীর্ষক একটি জাতীয় পর্যায়ের সেমিনার রবিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি গবেষণা সংস্থা থেকে প্রায় ৩০০ জন গবেষক,শিক্ষক-শিক্ষার্থী সেমিনারে আয়োজিত বিভিন্ন ইভেন্টে (ওয়ার্কশপ, রচনা ও পোস্টার প্রতিযোগিতা) স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী আয়োজিত এই সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরা এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করা।
এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. মোঃ মেহেদী হাসান খান । তিনি বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থান এবং কিভাবে বায়োটেকনোলজিস্টদেরকে জাতীয় উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ এবং লাইফ সাইন্স এন্ড আর্থ অনুষদের সম্মানিত ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার। সেমিনারের কিনোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত, ইউজিসি অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। সেমিনার আয়জন কমিটির সেক্রেটারি মোঃ মেহেদী হাসান সোহাগের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন জিইবি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. দিলারা ইসলাম শরীফ ।
সেমিনারের প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘কি-নোট সেশন’ যেখানে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি প্রফেসর ড. হাসিনা খান। তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং এবং টেকসই উন্নয়নে পাট কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. হাসিনা খান বলেন, ‘আধুনিক জিনোমিক্স যুগের জিনোমিক্স ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশ এবং রোগ প্রতিরোধী উন্নত পাটের জাত দেশের টেকসই উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে। পাট শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের সাধনার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি ফসল নয় বরং এই সোনালী ফসল আমাদের জাতীয়তাকে প্রতিনিধিত্ব করে’।
এরপর শুরু হয় টেকনিক্যাল সেশন। প্রথম টেকনিক্যাল সেশনে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে আই.সি.ডি.ডি.আর.বি র বিশিষ্ট গবেষক এবং ভাইরোলজি ল্যাব এন্ড জিনোমিক সেন্টারের প্রধান মুস্তাফিজুর রহমান এবং পিএইচডি এবং ইউজিসি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ।
ড. রহমান বলেন, ‘জিন ও জিনোমিক্স আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জিনোমিক্স ডেটাগুলো জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় অর্থবহ ভূমিকা পালন করে’।
ড. আজাদ তাঁর বক্তব্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জৈব সম্পদ প্রযুক্তির সুযোগ এবং সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান।
ড. শাহেদুর রহমানের মতে, ‘জীব প্রযুক্তি দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর পাশাপাশি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বদ্ধপরিকর’।
ড.ইসলাম সাই্ট্রাস উদ্ভিদ নিয়ে অত্যন্ত চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করেন- ‘সাই্ট্রাস উদ্ভিদের মিথস্ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন ডায়েটারি বায়োঅ্যাাক্টিভ পেপটাইডস মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখবে’।
অধ্যাপক ড. মান্নান বলেন, ‘বায়োটেকনলজির একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর হল ব্লু ইকোনমি। এটি বাংলাদেশের নতুন শিল্পক্ষেত্রের দ্বার উন্মোচন করবে’।
মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক উক্ত সেমিনারে অতিথিদের অংশগ্রহনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন । পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, ‘পৃথিবীকে দীর্ঘ মেয়াদে বাসযোগ্য করে রাখার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। আর এজন্যই শিক্ষার্থীদের মাঝে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সেমিনারটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপ’।
বিভাগের চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক জিইবি বিভাগের সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. দিলারা ইসলাম শরীফ বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে টেকসই উন্নয়নের ব্যাপক অর্থবোধক ও বিস্তৃত গুরুত্ব রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষমাত্রা অর্জনে বায়োটেকনলজির যে বিপুল সম্ভাবনা আছে তা আমাদের শিক্ষার্থীদের অবগত করা ও উৎসাহিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। একই সাথে বলতে চাই, এ সেমিনার শিক্ষার্থী, গবেষক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার পথকে আরো সুদৃঢ় করবে’।
জাতীয় পর্যায়ের সেমিনারটি আয়োজনে আর্থিক সহায়তা করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং টাইটেল স্পন্সর ছিলেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়াও আর্থিক সহায়তা করেছে হামিম গ্রুপ লিমিটেড। অন্যান্য সহযোগী স্পন্সর হিসেবে ছিলেন এল আর এন, এসকো, ন্যানোটেক, প্যারাডাইস, এস.এম.আই, ও.এম.সি, আইল্যান্ড সিকিউরিটিস।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কুইজ, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও প্রাইজমানি বিতরণ করা হয়।
ইবাংলা/আরএস/১৬ অক্টোবর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.