চলতি মৌসুমে ফুলকপির ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষকদের মতে বীজ বপন থেকে ৭০/৭৫ দিনের মধ্যেই ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারজাত করা সম্ভব। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পেতে আগাম জাতের কপি চাষের বিকল্প নেই। আগাম ফসলে বাজারে চাহিদা ভালো থাকে। চাহিদা থাকলে দামও ভালো থাকে। এবার আগাম শীতকালিন সবজি ফুলকপির কদর বেড়েছে।
ফলন ভালো হওয়াতে খুশি নুরুল মিয়া। ফুলকপির ক্ষেত পরিচর্যা করার সময় লাভের আশায় উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে নিজের অনুভূতির কথা জানান এই কৃষক।নুরুল মিয়া রংপুরের পীরগঞ্জের চৈত্রকোল ইউনিয়নের ঝাড়বিশলা গ্রামের বাসিন্দা। চলতি মৌসুমে এই ইউনিয়নের মতো অন্য ইউনিয়নগুলোতে ফুলকপির ভালো ফলন হয়েছে।
আরও পড়ুন…৭ মণের শাপলাপাতা মাছ বিক্রি হলো ৫০হাজার টাকায়
কৃষকরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো বীজ বপনের পাশাপাশি সুষম সার ব্যবহারের কারণে পীরগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নে এবার ফুলকপির ফলন ভালো হয়েছে। এতে লাভের আশায় মুখিয়ে আছেন তারা। এলাকার উৎপাদিত ফুলকপি চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ অঞ্চলের চাষিরা তাদের উৎপাদিত এই সবজি এখন বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত মৌসুমে এই সবজির চাহিদা বেশি হওয়াতে বাজার দরও ভালো পাচ্ছেন তারা।
চৈত্রকোল ইউনিয়নের ঝাড়বিশলা গ্রামের আরেক কৃষক আমির হামজা বলেন, সবাইতো এখন লাভের আশায় চাষাবাদ করে। সেই দিন থেকে ফুলকপিতে কোনো লোকসানের ঝুঁকি নেই। শুধু শীতকালেই নয়, এখন এই সবজি সারা বছরও উৎপাদন করা যায়। তবে আমাদের এলাকায় শীতের সময়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে। এ বছর প্রায় ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৫ শতাংশ জমিতে চমক জাতের হাইব্রিড ফুলকপি আবাদ করেছেন।
উপজেলার চাপাবাড়ী গ্রাম, শাল্টি পশ্চিমপাড়া, বড় আলমপুর ইউনিয়নের কৈগাড়ী গ্রাম, পাঁচগাছি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলছেন, শীতকালীন সবজি ফুলকপি আবাদ করে ভালো লাভ হওয়ায় এখানকার কৃষকরা এই সবজি চাষে ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছে। তবে এ বছর সারের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকদের বাড়তি খরচ হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলকপির ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষকরা জানান, পীরগঞ্জের স্থানীয় হাটবাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর এবং গাইবান্ধার বিভিন্ন হাটে ফুলকপির পাইকারদের কাছে তারা এই সবজি বিক্রি করেন। চাষবাদ ও বাজারজাতে কষ্ট হলেও ভালো ফলন আর আশানুরূপ দাম পাওয়ায় তারা অনেকটাই চিন্তামুক্ত। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাতেও পাঠানো হচ্ছে এই সবজি। অনেক এলাকাতে কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে পিচ হিসেবে ফুলকপি কিনে থাকেন। তবে সব মিলিয়ে ফুলকপি চাষে অন্যান্য ফসলের খরচের তুলনায় লাভ বেশি হয় বলে দাবি তাদের।
পাঁচগাছি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের কৃষক বুলু মিয়া বলেন, সার ও কীটনাশকের দাম একটু বেশি হওয়ায় কপি চাষে বর্তমানে এক একর জমিতে খরচ হবে প্রায় ১ লাখ টাকা। তারপরও বর্তমান যে বাজার রয়েছে, এ রকম থাকলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রংপুরের পাইকারি বাজারগুলোতে ফুলকপি প্রতি মণ ১০০০-১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি পাঁচ কেজি কেনা পড়ছে ২৫-২৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে এক কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা দরে।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে নানা প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে রকমারি শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন…সমাবেশের মাঠেই চলছে রান্না-খাওয়া
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, এ অঞ্চলের ফুলকপি চাষিরা অত্যন্ত শ্রমজীবী। ফসল উৎপাদনে তাদের মধ্যে অলসতা নেই। যে কারণে তারা ফসলের চাষ করে সুফল পাচ্ছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন চাষিদের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি ফসল চাষের জন্য কৃষকদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে চলেছে।
ইবাংলা/জেএন/১৮ নভেম্বর ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.