রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কিশোর গ্যাং; অভিযোগ করেও পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা সুফল
লিখন মুন্সি,মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুরে শহর এক আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। এখন গ্রাম থেকে শহরে, আর শহর থেকে গ্রামে সবখানেই বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের আদিত্য । চুরি-ছিনতাই ও আধিপত্য ধরে রাখতে সংঘর্ষে জরিয়ে পড়েন কিশোর দলের সদস্যরা।
এমনকি নিজেদের সংঘর্ষের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে আপলোড করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে এ অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় বিচার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। ফলে বেড়ে চলছে অপরাধ। পুলিশ বলছে, এদের দমনে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন…অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পেলেন ১০ কৃতি নারী
এছাড়াও বেশকয়েকদিন আগে রাস্তি এলাকার মনজিলা বেগম(৩০) এবং একই এলাকার রনি হাওলাদার(২৫) নামের দুই ব্যক্তিকেই এ কিশোর গ্যাংদের অত্যাচারে শিকার হতে হয়েছি। কিন্তু থানায় অভিযোগ করেও পায়নি কোন ফল। শুধু মনজিলা আর রনি না কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারের বলি একই এলাকার অনেকে। রীতিমতো করছে চাদা দাবি, অস্বীকার করলে হতে হয় অত্যাচারের শিকার। স্থানীয়দের দাবি দ্রæত যদি কিশোর গ্যাং সদস্যদের প্রতিহিত না করতে পারলে আতঙ্কের ভিতরে দিন কাটতে হয় পুরো এলাকা জুড়ে। তাই সরকার এবং প্রশাসনের কাছে জোর দাবি এই কিশোর গ্যাংয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ রাখা।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, জোরে হর্ন বাজিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিবাদ করায় গত ২৬ অক্টোবর মাদারীপুর শিবচরের সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপুকে রাস্তা থেকে তুলে নেয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। পরে লোহার রড দিয়ে আহত করে উপশহর এলাকায় ফেলে রাখে তাকে। রাহুল, ফাহাদ, হামজা ও আব্দুল্লাহসহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ দেয়ার সাতদিন পরে মামলা হয়। তবে এখনও গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি।
শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপু বলেন, আমি কলেজে লেখাপড়া করি, তাদের সাথে কোনো সময় শত্রæতা ছিল না। শুধুমাত্র মোটরসাইকেলে জোরে হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করায় আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ৮-৯ জন মিলে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেছে। আমি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার পর অভিযুক্তদের এখনো পুলিশ কোন গ্রেফতার করেনি। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে আমার একটা দাবি দ্রæত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক। তারা যেন আমার সাথে এরকম করছে আর যেন কারো সাথে না করে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।
জানা যায়, রাজনৈতিক ছায়ায় থেকে এসব কিশোর গ্যাং সদস্যরা নিজেদের পরিচিত বাড়ানো জন্য মারামারি ও সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমন বেশকিছু ভিডিও ভাইরালও হয়েছে ফেসবুকে। এ ভিডিও দেখে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন…এইচএসসি পাসে ৩০০ জনকে নিয়োগ দেবে গোল্ডেন হারভেস্ট
এদিকে গত ৫ নভেম্বর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন সদর উপজেলার দক্ষিণ দুধখালীর দিনমজুর শামীম আকন। তার অভিযোগ, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে পূর্ব রাস্তি এলাকার শাকিব হাওলাদার, রমিজ, হাবলু, হুমাই,রুবেল ও তুষারসহ গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে হাতুড়িপেটা করে।
দিনমজুর শামীম আকন বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি আমি দিন আনি দিন খাই, আমি কোন সময় কারো সাথে তর্ক বিতর্ক জড়াই নাই। একদিন কাজ শেষে দুধখালী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে প্রথমে কিশোর গ্যাং সদস্য শাকিব হাওলাদার, তুষার ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় আমার ওপর হামলা চালায়। সবাই মিলে আমাকে হাতুড়িপেটা করে। পরে চিৎকার চেঁচামেচির একপর্যায়ে আমাকে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ওরা। আমি তাদের বিচার চাই।
গত ২৩ অক্টবর ১২ বছরের রুমানকে পূর্বরাস্তির নায়েবের স্কুলে নিয়ে লাঠিসোটা দিয়ে বেধর মারধর করে হুমাই মাতুব্বর, রুবেল মাতুব্বর, অন্তর, রুবেল বেপারীসহ ১০-১২ জন।
ভুক্তভোগি রুমানের পরিবার জানান, এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলেও কোন সুরাহা পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্কুল শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, স্কুলে যাওয়ার পথে কিশোর গ্যাংরা খারাপ প্রস্তাব নিয়ে আমাদের রাস্তা অবরোধ করে। এবং মাঝে মাঝে তাদের ভয়ে স্কুলে যেতে আমাদের ঝামেলা হয়। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের পরিবারকে বলতে পারছি না। যদি তারা পরিবার বা আমাদের উপর হামলা চালায় সেই ভয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবকরা বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের কারণে আমাদের ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। যে কখন রাস্তায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা কি করে ফেলে। প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি কিশোর গ্যাংয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা।
মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, মাদারীপুর জেলাজুড়ে এক আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। চুরি-ছিনতাই ও নিজেদের আধিপত্য দেখাতে গ্যাং সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। এদের হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থী কিংবা পথচারী। এ গ্যাংদের দমনে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ সুধিজনদের।
আরও পড়ুন…দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর মৃতের জন্য সম্মিলিতভাবে দোয়া করা যাবে?
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, এ অপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে আইনি প্রক্রিয়া। অভিভাবকদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা হবে।
ইবাংলা/জেএন/১৯ নভেম্বর ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.