চেন হুই নামের এক চীনা তরুণী বাগানে কমলা পরীক্ষা করছেন। কমলা সংগ্রহের সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে। কমলার ভাল ফলন দেখে তার অনেক ভাল লাগছে। চেন হুই আপাদমস্তক শহুরে মেয়ে। তিনি শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে উঠেন। পিয়ানো বাজাতে পারেন এবং ভাল ইংরেজি বলেন।
কৃষি সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান ছিল না। ট্যানজারিন ও কমলার পার্থক্য কী-একসময় তাও তিনি জানতেন না। গ্রামাঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাও তিনি বুঝতেন না। গ্রাম তার জন্য অপরিচিত এক জায়গা ছিল। ২০১৩ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে কুয়াং চৌর একটি ব্যাংকে চাকরি পেয়েছিলেন। তবে, তিনি ভিন্ন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গ্রামে চলে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তখন তার বাবা গ্রামে নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছিলেন এবং পরিশ্রমী বাবাকে দেখে তাঁকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন চেন হুই।
আরও পড়ুন…প্রযুক্তির সহায়তায় ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার!
গ্রামে আসার পর প্রাণবন্ত গ্রাম এবং বড় ও মিষ্টি কমলা চেন হুইকে আকর্ষণ করে। এখানে প্রতিবছর কমলার ভাল ফলন হয়। তবে, উচ্চ দামে বিক্রি হয় না। এখানে ব্যাপক হারে চাষ হয় সাইট্রাস কমলা। এর অনেক দুর্বল দিক রয়েছে। একে শিল্পে রূপান্তর করা খুব দরকার। স্থানীয়দের আয় বৃদ্ধি করতে চেন হুই ও তার বাবা একটি আধুনিক ইকো কৃষি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানি ও কৃষকের সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে কমলা চাষ করেন এ বাপ-বেটি।
তারা ইকো চাষকে জনপ্রিয় করে তুলেন এবং স্থানীয় ব্র্যান্ড তৈরি করেন। যারা তাদের কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা করে – তাদের জন্য সবুজ ও ইকো চাষের স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করেন চেন হুই। এ স্ট্যান্ডার্ডের নিয়ম হচ্ছে কোন উদ্ভিদ-নাশক ব্যবহার করা যাবে না, যতটা সম্ভব কম কীটনাশক স্প্রে করা হবে। চেন হুই চান বাজারের চাহিদা পূরণে ব্র্যান্ডের সাইট্রাস কমলা চাষ করতে।
পাশাপাশি, চেন হুই বাজারের তুলনায় উচ্চ দামে কৃষকদের কাছ থেকে কমলা ক্রয় করেন। গত বছর তার সাহায্যে কৃষকদের আয় প্রতিহেক্টর জমিতে ৬০ হাজার ইউয়ান বেড়েছে। তার কোম্পানির উদ্যোগে গ্রামের ২০১ হেক্টর জমিতে কামলা চাষ হয়।
ইন্টারনেটের যুগে মোবাইলফোন নতুন ধরনের খামার সরঞ্জামে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের নানা প্লাটফর্মে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলেন চেন হুই। লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কমলা বিক্রি এবং গ্রামে তার বাগানের আরামদায়ক জীবন সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করেন।
চেন হুই বলেন, শহরের তরুণ সমাজ জানতে চায় যে তারা সাধারণত যেসব জিনিস খায় – সেসব কীভাবে বেড়ে উঠে। তারা গ্রামীণ জীবনযাপনও দেখতে চায়।
২০২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় আরসিইপি চুক্তি। আর চেন হুই উপলব্ধি করেন যে তার ব্যবসার জন্য এটা একটি সুযোগ হতে পারে। আরসিইপির নিয়মের পাশাপাশি তার ইংরেজি বলার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে চেন হুই তার ইকো কমলা থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াসহ আরসিইপিভুক্ত সদস্য দেশগুলোতে বিক্রি করেন। সেসঙ্গে নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিসহ ইইউর অনেক দেশে তার কমলা বিক্রি হয়।
চেন হুই বলেছেন, প্রাচীনকাল থেকে চীন বড় একটি কৃষি-ভিত্তিক দেশ। তাই আমি আশা করি, ভবিষ্যতে বিদেশে চীনের কৃষি পণ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। মেড ইন চায়না লেখা কৃষি পণ্য সবার স্বীকৃতি পাবে।
সময় দ্রুত চলে যায়। চেন হুই গ্রামে থাকছেন গত ৯ বছর ধরে। তিনি এখন সাইট্রাস কমলা চাষ বুঝেন এবং গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্কে গড়ে তুলেছেন। তিনি আঞ্চলিক ভাষাও বলতে পারেন। সবাই তাকে ‘কমলা আপা’ ডাকে।
আরও পড়ুন…১৬০০ কিলোমিটার হেঁটে বিশ্বকাপের মঞ্চে সৌদি নাগরিক সালমি
সময় পেলে তিনি আগের পুরোনো অভ্যাস চর্চা করেন। ফলের বাগানের পাশে ছোট একটি বাড়িতে বসে পিয়ানো বাজান। চেন হুই বলেন, শহর থেকে গ্রামে আসা কখনও মানের অবনমন নয়। তা শুধু ভিন্ন বাছাই। যেহেতু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেহেতু গ্রামকে আরও সুন্দরভাবে নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাব।লেখক: শিশির , সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/২২ নভেম্বর ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.