মাগুরায় স্কুল বাউন্ডারি দেয়ার নামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি’র বাড়িঘর ঘিরে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় প্রভাবশালিদের এহেন কর্মকান্ডে চরম বেকায়দায় পড়েছেন প্রতিবন্ধি আব্দুল মান্নানের পরিবার। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস ধরে মাগুরা’র মহম্মদপুর থানার তেলিপুকুর গ্রামের প্রতিবন্ধি মান্নানের পরিবার অনেকটা গৃহবন্দি জীবনযাপন করছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সরজমিন এলাকাবাসি ও ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিবন্ধি আব্দুল মান্নান’র সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহম্মদপুর থানার ঢুষরাইল মৌজার তেলিকাড়া গ্রামে স্ত্রী হাসিয়ারা বেগম’র নামের ( আরএস ১৪৯ খতিয়ানের ৩৪৮ নং দাগে) ৬ শতক জমিতে বাড়ি করে ৩০ বছর যাবত বসবাস করছেন। পরবর্তীতে তাদের বাড়ির পাশে ঢুষরাইল রেজিষ্ট্রার্ড বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এক সময় ওই বিদ্যালয়টি সরকারি করণ করা হয়।
২০২২সালের জুন মাসে ঢুষরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি পতু মোল্যা, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে প্রতিবন্ধি আব্দুল মান্নানকে তার বাড়ির জায়গা বিদ্যালয়ের জন্য ছেড়ে দিয়ে পাশের জায়গায় বাড়িঘর সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানান। ২০২২ সালের ২৩ জুন মহম্মদপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুজ্জামানের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হয় এই মর্মে যে বিদ্যালয়ের পাশের জায়গার গর্ত ভরাট করে বাড়ি তৈরির উপযোগি করে দেয়া হলে নিজের বাড়িঘর ভেঙ্গে এনে ওই জায়গায় আব্দুল মান্নান বাড়িঘর করবেন।
আরও পড়ুন…প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসী
আর বিদ্যালয়ের জন্য তার বাড়ির জায়গা ছেড়ে দিবেন। গত ৩০ আগষ্টের মধ্যে গর্ত ভরাট করে দেয়ার কথা থাকলেও সামান্য বালু দিয়ে সেখানে ঘর তৈরি করতে বলা হয় আব্দুল মান্নানকে। অসহায় হতদরিদ্র আব্দুল মান্নানের কাছে গর্ত ভরাট করার মত কোন টাকা না থাকায় তিনি বাড়ি সরিয়ে আনতে পারেননি। এরই মধ্যে একটি দুষ্টু চক্রের ইশারায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দু’একজনের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের সাথে প্রতিবন্ধি আব্দুল মান্নানের বাড়িঘর ঘিরে নেয়া হয়েছে।
তাদেরকে উৎখাত করার জন্য অনেক সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খামখেয়ালি ভাবে বিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে রাখেন। এতে আব্দুল মান্নান ও তার পরিবারের স্বাভাবিক চলাচল ও জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে। তাদের আতিœয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাদের বাড়িতে যেতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি আব্দুল মান্নানের প্রতিবেশি ফুলমিয়া,আকতার ও বারিক ক্ষোভের সাথে বলেন, গরীব অসহায় হওয়ায় তাদের চরম দুঃখ দুর্দশার কথা কেউ বুঝতে চাচ্ছে না।
আরও পড়ুন…দূষণ কমাতে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক
বাড়িঘর সরিয়ে নিতে তথা তাদের পুনর্বাসনে কোন সহযোগিতা করছে না। বিদ্যালয়ের স্বার্থের কথা বলে সকলে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বলছেন। কিন্তু তার অসহায়ত্বের কথা কেউ বুঝতে চাচ্ছেন না। আব্দুল মান্নান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,ঠিকমত সংসারের খরচ যোগাতে পারেন না। প্রতিবন্ধি ভাতার টাকা ও আতিœয়স্বজনের সহযোগিতায় কোন রকম জীবীকা নির্বাহ করেন।
এদিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নানা অজুহাতে তাদের উৎখাত করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে তাদের কিছু নেই। নিজে অন্ধ হওয়ায় কিছুই দেখতে পান না। বাড়িঘর ঘেরা থাকায় চলাচল করতে অনেক সমস্যা হয়। তার বাড়িঘর বাদে বিদ্যালয়ের জায়গা ঘেরার সুযোগ থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে তাদের বাড়ি ঘর সহ সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়েছে। আবার তার বাড়ির জায়গার বদলে যে জায়গা দেয়ার কথা হয়েছিল সেই জায়গা ভরাট করে দেয়া হচ্ছে না।
বাড়ি করার মত নিজের কোন জায়গা না থাকায় সরে যেতেও পারছেন না। এহেন পরিস্থিতিতে তাকে চরম দূর্বিসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তিনি শান্তিপূর্ণ ও স্বাধীনভাবে বসবাস করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ঢুষরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হান্নান মোল্যা জানান, প্রতিবন্ধি মান্নানের দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিত শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে মহম্মদপুর থানায় সালিশ বৈঠক হয়।
আরও পড়ুন…বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হলেন ফকর উদ্দিন মানিক
সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি স্থানীয় গ্রামবাসির আর্থিক সহযোগিতায় তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি তবিবর রহমান জানান, আব্দুল মান্নান একজন অসহায় প্রতিবন্ধি। তার প্রতি সকলের সহানুভতি আছে। গ্রামের সবাই মিলে পাশের জায়গা ভরাট করে দেয়া হচ্ছে,সেখানে তিনি বসবাস করতে পারবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধি মান্নানের চলাচলের জন্য বিদ্যালয়ের গেট খোলা রাখা হয়। তাছাড়া পাশের গর্ত ভরাট করে তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। আর তার চলাচলের জন্য উপযোগি রাস্তা রাখা হয়েছে।
ইবাংলা/জেএন/৩ ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.