প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো নক-আউট রাউন্ড। এজন্য অনেকটা নির্ভার থেকে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে দ্বিতীয় একাদশ মাঠে নামিয়েছিলো ব্রাজিল কোচ তিতে। তবে সেটিই যেন বুমেরাং হয়ে এলো সেলেসাওদের জন্য।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে বসলো ব্রাজিল। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় পর্বে উঠেছে হলুদ জার্সিধারীরা। আজ নক-আউটের লড়াইয়ে এইচ-গ্রুপের রানার-আপ দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল।
বাংলাদেশ সময় সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় স্টেডিয়াম ৯৭৪’এ কোরিয়ানদের বিপক্ষে মাঠে নামবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ব্রাজিলের মোকাবেলা করতে উজ্জীবিতও দক্ষিণ কোরিয়া। গ্রুপের নিজেদের শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে উরুগুয়েকে পেছনে ফেলে শেষ ষোলোতে উঠেছে এশিয়ার পরাশক্তিরা। আজ আরও একটি অঘটনের জন্ম দিয়ে সন হিউং মিনের নেতত্বাধীন কোরিয়া এবার ব্রাজিল বাঁধা পেরুতে চায়।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া একের পর এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিল। নক আউট পর্বের কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যেই গ্রুপ পর্বের বাধা পেরুনো ব্রাজিল মূল একাদশের নয়জন খেলোয়াড়কে বেঞ্চে রেখে দল সাজিয়েছিলেন কোচ তিতে।
ক্যামেরুনের গোলরক্ষক ডেভিস ইপাসির দুর্দান্ত ফর্মের কাছে টিকতে পারেনি তিতের বেঞ্চ একাদশ। ৯২ মিনিটে ভিনসেন্ট আবুবকরের গোলে আফ্রিকার অদম্য সিংহদের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত হয়। বিশ্বকাপে কোন আফ্রিকার দলেরবিপক্ষে এটিই ব্রাজিলের প্রথম হার।
এই গোলের পরপরই জার্সি খুলে উদযাপন করতে গিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারণে মাঠ ত্যাগ করতে হয়েছে আবুবকরকে। কিন্তু ততক্ষনে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করে দলকে জয় উপহার দেওয়া আবুববকর হাসিমুখেই মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। যদিও এই জয়ে গ্রুপ পজিশনের কোন হেরফের হয়নি। শীর্ষ দল হিসেবেই ব্রাজিল পরের রাউন্ডে উঠেছে। আর ঐতিহাসিক জয়কে সঙ্গী করে কাতার থেকে বাড়ির পথ ধরেছে ক্যামেরুন।
টানা নয় ম্যাচে জয়ের ধারা থেকে ছিটকে পড়া ব্রাজিলকে এখন উজ্জীবিত দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে নতুন করে ভাবতেই হচ্ছে। জায়ান্ট কিলার দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবার আগে গ্রুপ পর্বে এশিয়ান পরাশক্তির ম্যাচগুলোর খোঁজ খবরও নিচ্ছেন তিতে। সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিল প্রথম দুই ম্যাচে জয়ী হলেও প্রত্যাশানুযায়ী দলের আক্রমনভাগ পারফর্ম করেনি।
ভয়টা এখানেই, কারন কাউন্টার এ্যাটাক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে ইতোমধ্যেই নিজেদের গতিময় ফুটবলের প্রমাণ দিয়েছে তাতে তাদেরকে আটকাতে তিতেকে নতুক ছক কষতে হচ্ছে। এই নিয়ে বিশ্বকাপে টানা পাঁচ ম্যাচে প্রথমার্ধে কোন গোল পায়নি ব্রাজিল। নিজেদের ফেবারিট তকমা টিকিয়ে রাখতে হলে সেলেসাওদের এই ধারা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।
এই নিয়ে টানা নয় বিশ্বকাপে নক-আউট পর্বে খেলতে যাচ্ছে ব্রাজিল। ৩২ বছর আগে শেষ ষোল থেকে বিদায় নিয়েছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ক্লদিও ক্যানেজিয়ার একমাত্র গোলে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার সেই ম্যাচটি এখনো অনেকের মনেই গেঁথে আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামনে এখন ঐতিহাসিক অল-এশিয়ান কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার হাতছানি। ব্রাজিলের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া মাঠে নামার আগে দিনের শুরুতে আরেক ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মোকাবেলা করবে জাপান।
এর আগে একবারই শেষ ষোলোর পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছিল এশিয়ান টাইগার্সরা। ২০০২ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। সম্প্রতি ব্রাজিলের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে কোয়ারিয়ানরা।
এদিকে, প্রথম পর্ব না পেরোতেই ব্রাজিলের দলীয় চিকিৎসকরা বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সেলেসাও চিকিৎসক রদ্রিগো লাসমার অবশ্য নেইমার প্রসঙ্গে ইতিবাচক আপটেড দিয়েছেন। গোঁড়ালির ইনজুরি কাটিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শুরু থেকেই নেইমারের খেলার সম্ভাবনা রয়েছে ব্রাজিলের পোস্টারবয়ের।
এদিকে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচে হাঁটুর সমস্যায় পড়া গাব্রিয়েল জেসুস ও অ্যালেক্স টেলেসকে বিশ্বকাপে আর পাওয়া যাচ্ছেনা বলে অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন তিতে। টেলেসের ইনজুরি ও অ্যালেক্স সান্দ্রোর কোমরের সমস্যার কারণে লেফট-ব্যাক পজিশন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তিতে। তবে গোঁড়ালির সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন দানিলো, সেক্ষেত্রে তাকে দেখা যেতে পারে রাইট-ব্যাকে। এডার মিলিটাও রাইট-ব্যাক পজিশনেই থাকছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ান শিবিরেও রয়েছে ইনজুরি সমস্যা। হুয়াং হি-চ্যান পুরো টুর্ণামেন্টেই হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে ভুগছেন। আগের ম্যাচেও বদলী হিসেবে নেমে গোল করেছিলেন চ্যান। তাকে আবারো মূল দলে পাওয়া না গেছে লি জায়ে-সুংই মাঠে নামবেন শুরুর একাদশে। কাফ পেশির সমস্যার কারণে পর্তুগালের সঙ্গে মূল একাদশে ছিলেন না কিম মিন-জায়ে।
তবে আজকের ম্যাচে তার মূল দলে ফেরার আশা রয়েছে। লি কাং-ইন ও কিম ইয়ং-গুনও হালকা ইনজুরি সমস্যায় রয়েছেন। এছাড়া দলের তারকা স্ট্রাইকার সন হিউং মিনের উপর আরো একবার ভরসা করতে চাইছে দক্ষিণ কোরিয়া।
ইবাংলা /টিএইচকে
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.