দেশের স্বাস্থ্য খাতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। শিশু-মাতৃমৃত্যু রোধ, টাইফয়েড, পোলিও, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ সব সংক্রামক রোগগুলো প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আটটি মেডিকেল কলেজ থেকে বর্তমানে ১১৩টি মেডিকেল কলেজ হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় এত সব সফলতার পরও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে অসংক্রামক রোগগুলো, যা সব অর্জনগুলোকেই ম্লান করে দিচ্ছে।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত ‘বিজয়ের ৫১ বছরে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সেন্ট্রাল সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন…আবারও প্রতিযোগিতায় লড়ছেন জয়া!
যাদের পরিবারে অসংক্রামক ব্যাধি জনিত রোগ আছে, তাদের উচিত বিশেষভাবে সচেতন হওয়া । শৈশব থেকেই এ ধরনের পরিবারের সন্তানদের দিকে মনোযোগী হতে হবে। ওজন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড বা কোমল পানীয় গ্রহণ, ধূমপান—ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। ছেলেবেলা থেকে কায়িক শ্রম, ব্যায়াম ও খেলাধুলায় উৎসাহী করতে হবে এদের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫১ বছরে দেশের স্বাস্থ্য খাতে কী উন্নতি হয়েছে, সেটি নিয়েই আজকের অনুষ্ঠান। আমরা স্বাস্থ্যসেবায় অনেক অর্জন করেছি কিন্তু দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ অসংক্রামক রোগীগুলো। এগুলোতেই বর্তমানে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
উপাচার্য বলেন, এখন আর ঠিক মতো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক এখন মানুষের কাছে স্বাভাবিক খাবারে পরিণত হয়েছে। এর বাইরেও গরু, মুরগিকে যে খাবার দেওয়া হচ্ছে সেগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে। আমাদের অসংখ্য মানুষের কিডনি ড্যামেজ হচ্ছে, কারণ আমরা যখন-তখন ব্যথানাশক ওষুধ খাচ্ছি। আশঙ্কাজনক হারে কিডনি রোগী বেড়ে গেছে। হাসপাতালগুলো কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীতে ভরপুর।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ছে। ডায়াবেটিস প্রিভেনশনে আমাদের একটা গবেষণা শুরু হয়েছে। এটা সফল হলে আমাদের দেশের রোগীদের আর ডায়াবেটিসের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হবে না। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে আমরা আর কী কী অ্যাচিভমেন্ট করতে পারিনি সেগুলো নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করব।
গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যতদিন থাকব, গবেষণা না করলে পদোন্নতি পাওয়া যাবে না। গবেষণা পেপার না থাকলে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হওয়া যাবে না, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর থেকে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বা প্রফেসরও হওয়া যাবে না।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, গবেষণায় আমাদের বরাদ্দ খুবই কম ছিল, বর্তমান সরকার এসে এই খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আশা করি, আমাদের গবেষণাগুলো এতে করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে এবং মানসম্মত গবেষণা আমরা উপহার দিতে পারব। আগামী এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক সেরা গবেষণাপত্রগুলোতে বাংলাদেশের গবেষণাগুলো স্থান পাবে।
আরও পড়ুন…খুনিরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকুন
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের দেশ থেকে যে পরিমাণ রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে গেছে, এখন সেটি অনেক কমে এসেছে। এখন বরং অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা নেয়। কারণ হলো আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গত তিন বছর করোনা মহামারিতে আমাদের চিকিৎসকরা নিজেদের উজাড় করে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি মানুষ এসময়ে দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. জাহিদ হাসান বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের স্বাস্থ্য খাত অনেকদূর এগিয়ে গেছে। শিশু সার্জারির উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি, যে সার্জারিগুলো দেশে হতো না, এগুলো আমরা ইন্ডিয়া থেকে এনে করছি। শিশুদের প্রায় ৯৮ শতাংশই এখন দেশে চিকিৎসা নেয়।
তিনি বলেন, ৪ কোটি ৪০ লাখ গবেষণায় আমাদের বরাদ্দ ছিল, আমরা এটিকে ২২ কোটি টাকায় নিয়ে এসেছি। জেলা-উপজেলায় যদি চিকিৎসা সেবার আরেকটু সুযোগ করে দেওয়া যায়, তাহলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীদের এত ভিড় থাকত না।
জাহিদ হাসান বলেন, আটটি বিভাগের আটটি বিশেষায়িত হাসপাতালে আমরা চেয়েছিলাম শিশুদের একটা বিভাগ থাকুক। বিষয়টির গুরুত্ব আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাতে পারলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বোঝাতে পারিনি। কোনোমতেই তাকে বিষয়টা বুঝাতে পারিনি। একনেকে বিভাগটির অনুমোদন হলেও অবশেষে তালিকা থেকে তিনি শিশু বিভাগের নামটা কেটে দেন।
তিনি আরও বলেন, একজন চিকিৎসক হিসেবে আমরা বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করলেও তিনি সেটি বোঝেননি, কারণ তিনি চিকিৎসক নন। চিকিৎসকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাকিরা বুঝবেন না, এটাই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন…‘আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সেবক’
এসময় বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইবাংলা/জেএন/১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.