বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বান্দরবানে নেই কোন সরকারী নির্ধারিত ট্রানজিট। এরপরও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবাধে আসছে মিয়ানমার ও থ্যাইল্যান্ডের চোরাই গরু-মহিষ। গত কয়েক মাস ধরে গরু পাচার বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছে আইন শৃংলা বাহিনী। মাঝে মধ্যে মালিক বিহীন গরু আটক হলেও চোরাকারবারীরা রয়েছে অধরা। এই অবস্থায় সীমান্তে গরু-মহিষ ও মাদক পাচার নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চাকঢালা, আশারতলী, কম্বনিয়া, জারুলিয়াছড়ি ফুলতলী এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অন্তত শতাধিক মানুষ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। কেউ সীমান্ত পাহারা আবার কেউ চোরাই গরু গন্তব্যে পৌছানোর কাজে সম্পৃক্ত রয়েছে। ইতিপূর্বে সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিদিন গরু আনা হলেও গত একমাস ধরে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার গরু নিয়ে আসছে চোরাকারবারীরা।
আরও পড়ুন…গৃহকর্মীকে নির্যাতন-অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ মহিলা আ.লীগ নেত্রীসহ গ্রেফতার-২
স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আনা গরু প্রথমে গ্রামের বিভিন্ন খামারে মজুদ করে। পরবর্তী গর্জনিয়া বাজারে এনে ইজারাদারের কাছ থেকে রশিদ সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরবর্তী গর্জনিয়া বাজার থেকে ফাক্রিকাটা মুরার কাছা হয়ে মহেষকুম সড়ক, সোনাইছড়ি ভগবান টিলা-কাইয়ারখোপ সড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়।
আছাড়তলী এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান,‘সন্ধ্যা নামলেই চোরাই গরু ঢোকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাস্তাঘাটে লোকজন কমে গেলে এশার নামাজের পর থেকে এপারে নিয়ে আসা হয় গরুর পাল। এর আগে দিনেই সীমান্তের কাছে এনে মজুদ করা হয়। এশার নামাজের পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত লাগাতার গরু পাচার চলে। এক পালে ৮-১০টির অধিক গরু থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী, চোরাই এই গরু চোরাচালানের সঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ির একজন চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন ইউপি মেম্বার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জড়িয়ে পড়েছেন। যার কারনে এসব জনপ্রতিনিধিদের ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা গরু পাচার প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। এই গরু পাচার নিয়ে জেলা-উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় একাধিকবার আলাপ আলোচনা হলেও থেমে নেই চোরাই গরুর অবৈধ বানিজ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের পাঁচটি পয়েন্টে গরু পাচার হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন…ইবিতে ফজিলাতুন্নেছা হল ডিবেটিং সোসাইটির নেতৃত্বে যারা
এসব চক্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়াডের ইউপি সদস্য জসিম উদ্দীন ও ৪নং ওয়াডের ইউপি সদস্য আরেক জসিম উদ্দীন। অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন, উপজেলা যুবলীগ সাধারন সম্পাদক ও ৭নং ইউপি সদস্য আলী হোসেনও এই গরুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
এছাড়া আবদুল হাকিম, আবুল হাসেম, আব্দুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, আবদুল গফুর, জয়নাল আবেদীন, ছগির আলম, মনজুর আলম, শামসু, সোলতান, ফরিদুল আলম, আবু হান্নান, আনোয়ারুল ইসলাম রাসেলসহ দুই শতাধিক চোরাকারবারী এই গরু চোরাচালানে জড়িত।
তবে বরাবরের মতো এসব চোরাকারবারীরা গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত নয় বলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এই অভিযোগকে তারা ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দাবী করেন। স্থানীয়রা আরো জানান, প্রশাসনের সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্ক থাকা ব্যাক্তিরা গরু ও মাদক চোরাকারবারীদের নানাভাবে তথ্য পাচার করে থাকে।
চোরাকারবারীদের এলাকায় সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিতি দেয় তারা। যার কারনে আইন শৃংখলা বাহিনী অভিযানে যাওয়ার আগেই চোরাকারবারীরা সটকে পড়ে। এই ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: শফিউল্লাহ জানান, যারা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু বাংলাদেশে আনছে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃখলা বাহিনী ব্যবস্থা নিবে। এসব অবৈধ গরু ব্যবসায়ীদের ধরতে উপজেলা প্রশাসন আইনশৃখলা বাহিনীকে সবসময় সহযোগিতা করবে ।
আরও পড়ুন…ইবিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল প্রতিযোগিতা যৌথচ্যাম্পিয়ন ইবি ও চবি
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন সীমান্তে গরু চোরাচালান হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, রাতের আধারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকে সীমান্তের ওপার থেকে গরু নিয়ে আসে। অনেকে দূর্ঘটনারও স্বীকার হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে গরু চোরাচালান অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
ইবাংলা/জেএন/২১ডিসেম্বর, ২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.