গ্রীষ্মকালে যখন চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের সিয়া তাং গ্রামে যাবেন, তখন চোখে পড়বে সবুজ পাহাড়, পরিচ্ছন্ন নদনদী। গ্রামে চায়ের দোকানে পর্যটকরা গ্রামের সুন্দর পরিবেশে আরামদায়ক সময় কাটান। তবে, আগের সিয়া তাং গ্রামে সড়ক ছিল না, পানির পাইপ ছিল না, বিদ্যুত্ ছিল না, আয়-রোজগার ছিল না এবং সরকারি কোনো ভবন ছিল না; এমনই এক গরিব জায়গা ছিল এটি। লোকজনের এখনও কষ্টের কথা মনে আছে। তাহলে গ্রামটি কীভাবে বর্তমানের সুন্দর গ্রামে পরিণত হয়েছে?
আরও পড়ুন…নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘এআর’-এর অর্থ কি?
সড়ক নির্মাণ ছিল সিয়া তাংয়ের মানুষের জন্য বিরাট মাথা ব্যথা। তবুও তা সবচেয়ে জরুরী বিষয়। ১৯৮৮ সালে সিয়া তাং গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়। আট হাজারেরও বেশি মানুষের গ্রামে সবার জীবন অনেক কষ্টের ছিল, বাইরে থেকে কিছু পাঠাতে হলে মানুষকে কাঁধে করে নিতে হতো। মাথাপিছু আয় ছিল ২ শ’ ইউয়ানেরও কম। বাইরের থেকে বিচ্ছিন্ন, অনুন্নত, ভাঙাচরা- এটাই হল বাইরের বিশ্বে সিয়া তাং-এর পরিচয়। গত শতাব্দীর ৮০’র দশকেও সিয়া তাং গ্রামে কোনো সড়ক ছিল না।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একসময় ফুচিয়ান প্রদেশে কাজ করতেন। তিনি তিনবার সিয়া তাং গ্রামে গিয়েছিলেন, যাতে স্থানীয় লোকজনের প্রকৃত জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি খুঁজে বের করতে পারেন। গ্রাম পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনের জীবন অনেক কঠিন তিনি কখনই তা ভুলতে পারেন না। ঠিক তখন থেকে সি চিন পিং-এর নেতৃত্বে ও সাহায্যে সিয়া তাং গ্রামের পরিবর্তন শুরু হয়।
সিয়া তাং গ্রামের বাসিন্দা লিউ মিং হুয়া আগের কথা স্মরণ করে বলেন, সড়ক নেই বলে, স্থানীয় লোকজনের ভয় ছিল। তারা অসুস্থ হওয়ার ভয় করতো, গ্রামে সার কীভাবে আনবে- সে ভয় করতো, পশু পালন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতো। সড়ক না থাকায় গ্রামে যেতে সি চিন পিংয়ের ২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ৮ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছিল।
এখন স্থানীয় সরকার ও জনগণের যৌথ চেষ্টায় সিয়া তাং গ্রামে যথাক্রমে দু’টি বড় সড়ক তৈরি হয়েছে। কাছাকাছি সব জেলা ও শহরে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক। সিয়া তাংয়ের মানুষ কাঁধে করে মালামাল পরিবহনের ইতিহাসকে বিদায় জানিয়েছে।
সড়ক চালু হয়েছে, শিল্পও এর মাধ্যমে প্রাণ পেয়েছে। সিয়া তাং গ্রামের প্রাকৃতিক কৃষিজাত দ্রব্য পাহাড় থেকে বের হয়ে কোটি কোটি পরিবারে পৌঁছে গেছে। জনগণও দারিদ্র্যমুক্ত হতে পেরেছে।
২০১৫ সালে সিয়া তাং গ্রামে দেশের প্রথম দারিদ্র্যমুক্তকরণের ‘বিশেষ চা বাগান’ প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রামে ৪১৩ হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়। এর ফলে গ্রামের আয় বেড়েছে এক লাখ ইউয়ানেরও বেশি। এর সঙ্গে গ্রামের সব চাষ কৃষককে কমিউনিটির পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, একদিকে চা-এর গুণগতমান নিশ্চিত করা যায়, অন্যদিকে চা কৃষকরা বাজারের দামের ২০ শতাংশ বেশি দামে ভর্তুকি দিয়ে নিতে পারে।
২০১৯ সালের ৪ অগাস্ট, সিয়া তাং গ্রাম আনুষ্ঠানিকভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়। এ খবর জেনে সি চিন পিং সিয়া তাং গ্রামের জনগণকে এক চিঠি লেখেন। তিনি সবাইকে অভিনন্দন জানান এবং তাদেরকে দারিদ্র্যমুক্তকরণের ভিত্তিতে অব্যাহতভাবে সুন্দর বাসস্থান নির্মাণে উত্সাহ দেন।
কৃষকদের জীবন সমৃদ্ধ কি না, তা প্রধানত দেখতে হয় আয় দিয়ে। ২০২১ সালে সিয়া তাং গ্রামের কৃষকদের মাথাপিছু আয় ছিল ২০ হাজার ইউয়ানের বেশি। সিয়া তাং মানুষ সার্বিকভাবে গ্রামাঞ্চল পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধ উন্নয়নের সঙ্গে সিয়া তাং গ্রামে তরুণ মানুষজন ফিরে আসছে। এজন্য বিভিন্ন সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে শতাধিক তরুণ মানুষ গ্রামে ফিরে এসেছে, স্থানীয় কৃষকদের আয়ও অনেক বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন…ছোট রানের ম্যাচে রাজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে সিলেটের জয়
এখন সিয়া তাং গ্রামে স্থানীয় সুস্বাদু খাবার খাওয়া যায়। বিভিন্ন রীতিনীতি অনুভব করা যায়। আগের সব কিছু বদলে গিয়ে দরিদ্র গ্রামটি এখন সুখের গ্রামে পরিণত হয়েছে। সিয়া তাং গ্রামের লোকজন নিজের চেষ্টায় নতুন গল্প রচনা করেছেন।
লেখক: শুয়েই ফেই ফেই,সিএমজি।
ইবাংলা/জেএন/৬ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.