শীত চলে গেছে। তারপরও বেশিরভাগ সময় শীত অনুভূত হওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে।শীতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সতর্ক থাকতেই হবে। অনেকের শীত বা ঠাণ্ডার অনুভূতি তীব্র। তাই শীতে তারা একেবারে জবুথবু হয়ে পড়েন। তারা কিভাবে শীতের কাঁপুনি থেকে নিজেদের রক্ষা করবেন? সেসব জানাতেই আজকের এই আয়োজন।
খাদ্যতালিকায় মনোযোগ দিন
এরমধ্যে জ্বর আসা, ঠাণ্ডা লাগা, ক্লান্তিভাব ইত্যাদি স্বাভাবিক লক্ষণ। তবে এসব কারণ ছাড়াও শীত অনুভূত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।শীতের সঙ্গে স্বাস্থ্যগত সমস্যার সংযোগ রয়েছে। যাদের ওজন কম তাদের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা গেছে, যাদের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) ১৮ দশমিক ৫ অথবা এর কম হলে বেশি শীত লাগতে পারে। দেহে চর্বি কম থাকলে শীত বেশি লাগবে। তাই খাদ্যতালিকায় রদবদল করা জরুরি। এক্ষেত্রে আপনার দেহের বিভিন্ন পুষ্টিগুণের ঘাটতি বিবেচনায় খাবার খেতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হতে হবে। অনেকে মনে করেন, শীতের সময় প্রোটিন বা চর্বিজাতীয় খাবার খেলেই বেশি উপকার মিলবে। বাস্তবে এমনটি ভাবা উচিত নয়। পুষ্টিকর খাবার গরম গরম খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষত স্যুপ, আদা-চা, গ্রিন টি ইত্যাদি উষ্ণ পানীয় বারবার খান।
শরীরের ঘাটতিতে মনোযোগ দিন
অনেকেরই শীত কিংবা ঠাণ্ডার প্রতি অনুভূতি বেশি থাকে। এমনটা কারো দৈহিক প্রবণতা বলে মনে হলেও বাস্তবে এমনটা নয়। আপনার শরীরে বেশ কিছু ঘাটতির কারণেও বেশি শীত অনুভূত হতে পারে। দেহে চর্বির ঘাটতির পাশাপাশি থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি থাকলেও সব সময় শীত লাগে। তাছাড়া শীতে হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগীদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন বি১২ না গ্রহণ করলেও এমন হয়।
গোটা দেহে অক্সিজেন প্রবাহে কাজ করে বি১২। এর অভাবে লোহিত রক্তকণিকার অভাব ঘটে। এতেও শীত ভাব বাড়ে। শুধু তাই নয়, শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে শীতের অনুভূতি বাড়ে। কারণ এই খনিজ পদার্থ লোহিত রক্তকণিকাকে পুরো দেহে অক্সিজেন বহন করতে সহায়তা করে। তাই শীতের আগে একবার একটি হেলথ চেকাপ করিয়ে নিজের শরীরের ঘাটতি শনাক্ত করে নিন।
পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সারাক্ষণ শীত শীত লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ঘুমের অভাবে হাইপোথ্যালামাসের কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। হাইপোথ্যালামাস বিপাক এবং শরীরের তাপমাত্রাসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুম না হলে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে অসাড় হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। সেজন্য শীতের সময় নিয়মমাফিক ঘুমের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বিশেষত ঘুমের আধঘণ্টা আগ থেকে ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে এবং ঘরে সঠিক তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমানোর সময় শীতে উষ্ণ থাকতে হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত গরম ব্যাগে পা না পুড়ে যায়, সেদিকে লক্ষ রাখবেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশি সতর্ক থাকবেন। কারণ, তাঁদের পায়ের অনুভূতি কম।
উদ্বেগ কমান
উদ্বেগের ফলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত প্যানিক অ্যাটাকসহ নানা উদ্বেগজনক সমস্যা থেকে শীত শীত অনুভূতি কাজ করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, শীতের সময় বিষণ্ণতা বেশি কাজ করে। আর শীতল অনুভূতির ক্ষেত্রে শীতের কিছুটা প্রভাব তো রয়েছেই। তাই শীতে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিন।
পা ও কান ঢেকে রাখুন
শীতে ঘরে-বাইরে কোথাও খালি পায়ে হাঁটবেন না। বাড়িতে হাটাহাটির সময় স্লিপার বা উষ্ণ স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন। সবসময় পায়ে উলের মোজা রাখুন। এই আবহাওয়ায় উলের মোজা বেশ আরাম দিবে। রাতে ঘুমোনোর আগেও মোজা পরতে পারেন। যদি পা ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার অনুভূতি হয় তাহলে মোজা পরুন বা গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। পা ও কান ঢেকে রাখতে পারলে শীত শীত অনুভূত কম হবে
সক্রিয় থাকুন
শীতে ঝিম মেরে বসে থাকবেন না। যারা ব্যায়াম করেন না তারাও হাটাহাটি করুন। পায়ে রক্তচলাচল বাড়ালে হাটার সময় কষ্ট হবে না।
ত্বকের যত্ন
শীতে ত্বকের জন্য বাড়তি যত্ন নিতেই হবে। বাইরে থেকে ফিরলে ঘরে ঢুকে ইষদুষ্ণ গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রেখে দ্রুত তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর ময়েশ্চারাইজার মাখুন। নিজেকে যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখলে শীত শীত ভাব কমবে।
নিয়মিত গোসল করুন
শীতে অনেকেই দীর্ঘক্ষণ গোসল করেন না। তাতে বরং আরও বেশি শীত শীত অনুভূত হয়। শীতে তাই নিয়মিত গোসল করুন। প্রয়োজনে গরম পানি করে নিন।
ইবাংলা/জেএন/১৬ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.