আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তবে কখন, কোথায় কর্মসূচি থাকবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক করবে ক্ষমতাসীন দলটি। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের যৌথ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন ঘোষণা দেন।
এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছর জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় এক বছর আগে আওয়ামী লীগের এমন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ঢাকায় যে কর্মসূচিই দিক না কেন, পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। অর্থাৎ বিএনপিকে একা মাঠে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে না। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা না এলে এভাবেই আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে।
এর মধ্যে বিরোধী দল নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রস্তুতি নিতে নিজ এলাকায় চলে যাবেন। আর বিএনপি ভোটে না এলে তাদের আন্দোলন ঠেকাতে যেখানে যে রকম দরকার, সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের রাজপথের কর্মসূচির সবকিছুই নির্ভর করছে বিএনপির ওপর।
শনিবার বেলা দুইটায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি বাড্ডার হোসেন মার্কেট থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
আরও পড়ুন…ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সাথে জার্মান চ্যান্সেলরের সাক্ষাত
একই দিন আজ সকাল ১০টায় উত্তরার আজমপুরে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এতে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ শান্তি সমাবেশ করবে। এতেও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপির গণপদযাত্রা কর্মসূচির পাল্টা কী কর্মসূচি নেওয়া যায়, সে জন্য গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথ সভা করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। যৌথ সভা বলা হলেও সেখানে ওবায়দুল কাদের একাই বক্তৃতা করে বৈঠক শেষ করেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, বক্তৃতা শেষ করে ওবায়দুল কাদের দলীয় কার্যালয়ের সাততলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে কথা বলেন। এ সময় বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি পালনের বিষয়ে নির্দেশনা দেন তিনি। সিদ্ধান্ত হয়, আজকের উত্তরার শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সমাবেশে রূপ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন…মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জান্তা সরকারের কঠোর আইন
এ সময় আরও সিদ্ধান্ত হয়, ৩০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে দলটির মহানগর দক্ষিণ শাখা। একই দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে।
যদিও বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি বিষয়ে যৌথ সভায় উল্লেখ করেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকালের যৌথ সভায় বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দল, জোট ও সংগঠনের কর্মসূচিতে উসকানি না দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। তিনি এ সময় বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে কোনো সংঘাতমূলক পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়।
আমাদের দলের এবং সরকারের যেন কোনো বদনাম না হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এখানে পাল্টাপাল্টির কোনো বিষয় নয়।’
আগামী রোববার রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা রয়েছে। সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের ওই সমাবেশে না যাওয়ার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। পরে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রথম আলোকে জানান, বিএনপির কর্মসূচির কারণেই ঢাকা ছেড়ে মহানগর নেতাদের না যাওয়ার জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।
ডিসেম্বর থেকে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি চলছেই
৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির গণ–পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে। এ দুই দিনও পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। তবে স্থান, কর্মসূচির শিরোনাম ও অতিথি কারা থাকবেন, সেটি পরে ঠিক করা হবে।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ‘সতর্ক পাহারা’র নামে আওয়ামী লীগ মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে রাজধানী নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করে।
এরপর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যত কর্মসূচি পালন করেছে, সেসব দিনে কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগও। প্রথম কিছুদিন ‘সতর্ক পাহারা’র নামে রাজধানীর একাধিক স্থানে মিছিল-সমাবেশ করে। কোথাও কোথাও তারা ‘শান্তি সমাবেশ’ করে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিকবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকে সরে আসার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁদের কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টা নয় বলে প্রকাশ্যে দাবি করে আসছেন।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের শীতবস্ত্র বিতরণ ও প্রীতিভোজ
এ পরিস্থিতিতে গণপদযাত্রা কর্মসূচির বাইরে ক্ষমতাসীন দলের উসকানিমূলক পাল্টা কর্মসূচি এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদরে সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
ইবাংলা/জেএন/২৮ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.